পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/৩৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কন্‌গ্রেস
৩৭৯

যন্ত্রশক্তিতে লড়াই যে চলতে পারে এইটে প্রমাণ করতে তাঁরা আসা। একটা একটা উপলক্ষ নিয়ে তিনি লড়াই শুরু করে দিলেন; কোনোটাতে যে শেষ পর্যন্ত জিতেছেন তা বলতে পারি নে, কিন্তু পরাভবের মধ্য দিয়ে জেতবার ভূমিকা সৃষ্টি করেছেন। ক্রমে ক্রমে সেই মন তৈরি করছেন যে মন তাঁর সংকল্পিত অস্ত্র যথাযোগ্য সংযম ও সাহসের সঙ্গে ব্যবহার করতে পারে। এই অস্ত্র ছাড়া কেবল যে আমাদেরই উপায়ান্তর নেই তা নয়, সমস্ত পৃথিবীরই এই দশা। হিংস্র যুদ্ধ নিরন্ত; সে একই কেন্দ্রের চারি দিকে ধ্বংসসাধনের ঘুরপাক খাওয়ায়, তার সমাপ্তি সর্বনাশে।

 হিংস্র যুদ্ধের ফৌজ তৈরি করা সহজ, বছরখানেকের কুচকাওয়াজে তাদের চালিয়ে দেওয়া যায় রণক্ষেত্রে। কিন্তু অহিংস্র যুদ্ধের মনকে পাকা করে তুলতে সময় লাগে। অশিক্ষিত লোক নিয়ে ভিড় জমাননা অনেক দেখা গেল; তাদের নিয়ে দক্ষযজ্ঞ ভাঙা চলে, এমন সিদ্ধিলাভ চলে না যা মূল্যবান। এমনকি পাশব শক্তির রীতিমত ধাক্কা খেলে তারা আপনাকে সামলাতে পারে না, ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

 পৃথিবীতে আজ যে-সব জাতি যে-কোনো রকম লড়াই চালাচ্ছে তাদের সকলেরই জোর সর্বজনীন জনশিক্ষায়। বর্তমান যুগ শিক্ষিত বুদ্ধির যুগ, স্পর্ধিত মাংসপেশীর যুগ নয়। জাপানের তো কথাই নেই— বড়ো বড়ো অন্য সকল প্রাচ্য জাতিই সর্বত্র জনশিক্ষাসত্র খুলেছেন। আজকের দিনে আমরা দেশের বহু কোটি চোখ-বাঁধা মোহের বাহন নিয়ে এগোতে পারব না। মহাত্মাজি অসহযোগ আন্দোলন স্থগিত রেখে জনশিক্ষায় মন দিয়েছেন। বোধ করি প্রমাণ পেয়েছেন, ভিড় জমিয়ে অসহযোগ দেখতে দেখতে অসহ্য হয়ে ওঠে।

 আজকের দিনে কোন্ জননায়ক পলিটিক্‌স্‌কে কোন্ পথে নিয়ে যাবেন তা নিয়ে অনেক আলোচনা চলছে। মনে নানা সংশয় জাগে, স্পষ্ট বুঝতে পারি নে এ-সকল পথযাত্রার পরিণাম। কিন্তু নিশ্চিত বিচার করা আমার