পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/৪০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০৩
আরােগ্য
৪০৩

সংসারের বহিরঙ্গকেই সম্পূর্ণ মূল্য দিই বলেই সংসারে এত অশান্তি ঘটে এবং মিথ্যার সৃষ্টি হতে থাকে। কেননা এই বাহিরের দিকেই আমরা পরস্পরের সহিত বিচ্ছিন্ন এবং একমাত্র আপনার মধ্যেই আবদ্ধ।

 আজ আমি রোগের দশা অতিক্রম করছি বলেই আরোগ্য কাকে বলে সেটা বিশেষভাবে অনুভব করি। কিন্তু যথার্থ আরোগ্য সে জীবনের সকল অবস্থারই সম্পদ। সেই আরোগ্যে আমরা সমস্ত বিশ্বভুবনের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে যোগস্থাপন করতে পারি। জগতে আমাদের অস্তিত্ব আনন্দময় হয়ে ওঠে। তখন আমাদের দেহের অনুকূল অবস্থা। এই-যে আরোগ্যতত্ত্ব এটা দেহের অন্তরবিভাগের সম্পদ, অলক্ষ্যে সকল দেহে ব্যাপ্ত হয়ে কাজ করে। অসুস্থ হলেই সেই অন্তরগুঢ় সামঞ্জস্য ভেঙেচুরে গিয়ে অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে পীড়িত করতে থাকে। তখন তার বিরোধের অবস্থা। সেইরকম আমাদের সত্তার যে অস্তরবিভাগে আধ্যাত্মিক সত্য পরিব্যাপ্ত হয়ে থাকে তার প্রভাব যখন অক্ষুন্ন হয়, তখন সর্বত্র তার শান্তি এবং সকলের সঙ্গে তার সামঞ্জস্য। এই আন্তরিক সম্পূর্ণতাকে উপলব্ধি করবার সাধনায় কোনো বয়সের ভেদ নেই। তরুণ অবস্থায় নানা-প্রকার আসক্তির আবিলতায় এই উপলব্ধির ব্যাঘাত ঘটে, কিন্তু যাঁরা তাকে অতিক্রম করে আপনার আত্মাকে উপলব্ধি করতে পারেন তাঁরা সর্বত্র শান্তিলাভ করেন। কারণ, তাঁরা মানবতার সত্যকে অনুভব করতে পারেন, এবং তাঁদের ভয় থাকে না— তাঁরা মৃত্যুকে অতিক্রম করেন।

 মানব-ইতিহাসে কোনো কোনো জাতির মধ্যে এই সত্যের উপলব্ধির ইতরবিশেষ দেখা যায়। য়ুরোপীয় সভ্যতা প্রথম থেকেই বাহিরে আপনার সার্থকতা অন্বেষণ করেছে এবং লোভকে কর্ণধার করে দেশে দেশে, বিশেষভাবে এশিয়ায় ও আফ্রিকায়, দস্যুবৃত্তি-দ্বারা ধনসঞ্চয় করেছে। যে বিজ্ঞান যথার্থ আত্মসাধনার সহায় তাকে বিশুদ্ধ জ্ঞানের পথ থেকে ভ্রষ্ট করে জগতে মহামারী বিস্তার করেছে। এই দুর্গতির অন্ত কোথায়