পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/৪০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০৪
কালান্তর

জানি নে। অপর পক্ষে কোনো কোনো জাতি অপেক্ষাকৃত সহজে তাদের স্বভাবকে অনুসরণ করে বাহিরের চিত্তবিক্ষেপ থেকে শান্তিলাভ করে এসেছে। তারা বিবাদ ক’রে, লড়াই করে মানুষের গৌরব সপ্রমাণ করতে চায় নি। বরঞ্চ লড়াই করাকে তারা বর্বরতা বলে জ্ঞান করেছে। চীন, তার প্রধান দৃষ্টান্ত। বহু শতাব্দী ধরে আপনার সাহিত্য, অতুলনীয় শিল্প ও অতিগভীর তত্ত্বজ্ঞানের মধ্যে মনকে সম্পদশালী করে রাখতে পেরেছে। মানুষের চরম সত্য যে তার অন্তরে সঞ্চিত এই কথাটা যতই তারা জীবনের ব্যবহারে সপ্রমাণ করেছে ততই তারা মহতী প্রতিষ্ঠা পেয়ে এসেছে। আজ লোভের সঙ্গে, বিজ্ঞানবাহন রিপুর সঙ্গে, তার শশাচনীয় বিরোধ ঘটল।

 আমাদের বিশ্বাস, একদিন যখন এই বিরোধের অবসান হবে তখন চীন তার সেই চিরন্তন প্রাচীন শান্তিকে পুনরায় পৃথিবীতে স্থাপন করতে পারবে। কিন্তু যারা লোভকে কেন্দ্র করেছে তারা জয়লাভ করলেও আত্মপরাভবের বিপত্তি থেকে কোনোদিন রক্ষা পাবে কি না সন্দেহ করি। এই লোভের শেষ পরিণাম মহতী বিনষ্টি। পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস, পরস্পরের অর্জিত সম্পদের প্রতি লুব্ধ হস্তক্ষেপ— এই অভ্যাস অনার্য অভ্যাস এবং এই অভ্যাস মাদকতার মতো শরীর মনকে অভিভূত করে রাখে। তার থেকে নিজেকে উদ্ধার করা পরম আঘাতেও অসাধ্য। ইতিহাসের এই নিষ্ঠুর শিক্ষা দেশকে এবং ব্যক্তিগতভাবে আমাদের প্রত্যেককেই মনের ভিতর ধ্যান করতে হবে। কারণ, পাশ্চাত্য সংক্রামকতা আমাদের জাতির মধ্যে প্রবেশ করে ভারতবর্ষের পুরাতন আধ্যাত্মিক বীর্যকে প্রতিদিন পরাস্ত করছে। ঋষিবাক্যে যে পরম মন্ত্র একদিন আমরা পেয়েছিলেম সে হচ্ছে শান্তং শিবং অদ্বৈতম্— এক সত্যের মধ্যে সত্যের এই তিন রূপ বিধৃত। শান্তি এবং কল্যাণ এবং সর্বমানবের মধ্যে ঐক্য— এই বাণীর তাৎপর্য মানুষকে তার সত্য পরিচয়ে