পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৪
কালান্তর

আমাদের কাছে অভাবনীয় নয়। যা অভাবনীয় নয় তা লইয়া কেহ ভাবনাই করে না। আমরাও ভাবনা করি নাই, সহ্যই করিয়াছি। কিন্তু চিঠিতে যে কথাটা অমনিতে চোখ এড়াইয়া যায় সেটার নীচে লাইন কাটা দেখিলে যেমন বিশেষ করিয়া মনে লাগে, আমাদের রাস্তার জলাশয়তার নীচে তেমনি জোড়া লাইন কাটা দেখিয়া, শুধু মনটার মধ্যে নয় আমাদের গাড়ির চাকাতেও ক্ষণে ক্ষণে চমক লাগিল। বর্ষাও নামিয়াছে, ট্র্যামলাইনের মেরামতও শুরু। যার আরম্ভ আছে তার শেষও আছে, ন্যায়শাস্ত্রে এই কথা বলে; কিন্তু ট্রামওয়ালাদের অন্যায় শাস্ত্রে মেরামতের আর শেষ দেখি না। তাই এবার লাইন কাটার সহযোগে যখন চিৎপুর রোডে জলস্রোতের সঙ্গে জনস্রোতের দ্বন্দ্ব দেখিয়া দেহমন আর্দ্র হইতে লাগিল, তখন অনেক দিন পরে গভীরভাবে ভাবিতে লাগিলাম, সহ্য করি কেন।

 সহ্য না করিলে যে চলে, এবং না করিলেই যে ভালো চলে, চৌরঙ্গি অঞ্চলে একবার পা বাড়াইলেই তা বোঝা যায়। একই শহর, একই ম্যুনি সিপালিটি, কেবল তফাতটা এই, আমাদের সয়, ওদের সয় না। যদি চৌরঙ্গি রাস্তার পনেরো-আনার হিস্সা ট্র্যামেরই থাকিত, এবং রাস্তা উৎখাত করিয়া লাইন মেরামত এমন সুমধুর গজগমনে চলিত, আজ তবে ট্রাম-কোম্পানির দিনে আহার রাত্রে নিদ্রা থাকিত না।

 আমাদের নিরীহ ভালোমানুষটি বলেন, 'সে কী কথা! আমাদের একটু অসুবিধা হইবে বলিয়াই কি ট্রামের রাস্তা মেরামত হইবে না?'

 ‘হইবে বৈকি! কিন্তু এমন আশ্চর্য সুস্থ মেজাজে এবং দীর্ঘ মেয়াদে নয়।

 নিরীহ ভালোমানুষটি বলেন, “সে কি সম্ভব?”

 যা হইতেছে তার চেয়ে আরো ভালো হইতে পারে, এই ভরসা ভালোমানুষদের নাই বলিয়াই অহরহ চক্ষের জলে তাদের বক্ষ ভাসে এবং তাদের পথঘাটেরও প্রায় সেই দশা। এমন করিয়া দুঃখকে আমরা সর্বাঙ্গে