পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কর্তার ইচ্ছায় কর্ম
৭১

যাই হোক, ‘পায়ের বেড়িটা অক্ষয় হোক’ বলিয়াই যখন আশীর্বাদ করা হইল তখন দয়ালু লোক এ কথাও বলিতে বাধ্য যে, ‘মানুষদের কাঁধে চড়িয়া বেড়াইতে প্রস্তুত হও।’ যত রাজ্যের জাতের বেড়া, আচারের বেড়া, মেরামত করিয়া পাকা করাই যদি পুনরুজ্জীবন হয়— যদি এমনি করিয়া জীবনের ক্ষেত্রকে বাধাগ্রস্ত ও বুদ্ধির ক্ষেত্রকে সংকীর্ণ করাই আমাদের গৌরবের কথা হয়— তবে সেইসঙ্গে এ কথাও বলিতে হয়, ‘এই অক্ষমদের দুই বেলা লালন করিবার জন্য দল বাঁধো।’ কিন্তু দুই বিপরীত কূলকে একসঙ্গে বাঁচাইবার সাধ্য কোনো শক্তিমানেরই নাই। তৃষার্তের ঘড়াঘটি সমস্ত চুরমার করিবে, তার পরে চালুনি দিয়া জল আনিতে ঘন ঘন ঘাটে ঘরে আনাগোনা, এ আবদার বিধাতার সহ্য হয় না। অনেকে বলেন, এ দেশে পদে পদে এত যে দুঃখদারিদ্র্য তার মূল কারণ, এখানকার সম্পূর্ণ শাসনভার পরজাতির উপর। কথাটাকে বিচার করিয়া দেখা দরকার।

 ইংরেজ-রাষ্ট্রনীতির মূলতত্ত্বই রাষ্ট্রতন্ত্রের সঙ্গে প্রজাদের শক্তির যোগ। এই রাষ্ট্রতন্ত্র চিরদিনই একতরফা আধিপত্যের বুকে শেল হানিয়াছে, এ কথা আমাদের কাছেও কিছুমাত্র ঢাকা নাই। এই কথাই সরকারি বিদ্যালয়ে আমরা সদরে বসিয়া পড়ি, শিখি, এবং পড়িয়া এগজামিন পাস করি। এ কথাটাকে এখন আমাদের কাছ হইতে ফিরাইয়া লইবার আর উপায় নাই।

 কন্গ্রেস বলো, লীগ বলো, এ-সমস্তর মূলই এইখানে। যেমন য়ুরোপীয় সায়ান্সে আমাদের সকলেরই অধিকারটা সেই সায়ান্সেরই প্রকৃতিগত, তেমনি ইংরেজ-রাষ্ট্রতন্ত্রে ভারতের প্রজার আপন অধিকার সেই রাষ্ট্রনীতিরই জীবনধর্মের মধ্যেই। কোনো একজন বা দশজন বা পাঁচশোজন ইংরেজ বলিতে পারে, ভারতীয় ছাত্রকে সায়ান্স্ শিখিবার সুযোগটা না দেওয়াই ভালো; কিন্তু সায়া সেই পাঁচশো ইংরেজের কণ্ঠকে লজ্জা দিয়া বজ্রস্বরে বলিবে, ‘এসো তোমরা, তোমাদের বর্ণ যেমনি হোক,