এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
লক্ষ্মীর ধ্যানঃ-- পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ-
কুম্ভুযোনি করিলেন ভক্ষ্য মৃগগণ,=। দেবঋষি ভক্ষ্য হেতু মৃগের সৃজন।। রিপুসম মৃগে অস্ত্র করিব প্রহার। নীতিশাস্ত্রে কহে হেন ক্ষত্রিয়-আচার।। ঋষি বলে মৃগ বধ ক্ষত্রিয়ের ধর্ম্ম। রমনে বিরোধ করা মহাপাপ কর্ম্ম।। কুরুবংশে জন্মি কর হেন অনুচিত। রতিরসে জ্ঞাত সব শাস্ত্রেতে পণ্ডিত।। রাজা হ'য়ে হেন কর্ম্ম কর দুরাচার। রাজা যদি পাপ করে মজিবে সংসার।। ঋষির নন্দন আমি তপের সাগর। সকল ত্যাজিয়া থাকি বনের ভিতর।। মৃগরূপে আমি করি হরিণী রমণ। হেনকালে মোর তুমি তুমি বধিলে জীবন।। মৃগদেহে মারিলা ইহাতে পাপ নয়। এই পাপ মারিলা যে মৈথুন সময়।। এই হেতু শাপ আমি দিলাম রাজন। মৈথুন সময় হবে তোমার মরণ।। আমি যেন অশুচিতে যাই পরলোক। এইমত হইবে তোমার চিত্তে শোক।। স্বর্গেতে রহিতে শক্তি নহিবে তোমার। কভু মিথ্যা নাহি হবে বচন আমার।। এত বলি ঋষিপুত্র ত্যাজিল জীবন। হইল শুনিয়া পাণ্ডু বিষন্ন বদন।। শোকেতে আকুল হৈয়া করেন ক্রন্দন। প্রদক্ষিণ করি মৃত ঋষির নদন।। ভার্য্যা সহ কান্দেন যেমন বন্ধুশোকে। অশেষ বিশেষ রাজা নিন্দে আপনাকে।। কেন হেন বড় কুলে হইল উদ্ভব। আপনার কর্ম্মভোগ করে লোক সব।। শুনিয়াছি পিতা করিলেন কদাচার। কামলোভে অল্পকালে তাঁহার সংহার।। তাঁর ক্ষেত্রে জন্ম মম সহজে অধম। দুষ্টবুদ্ধি দুরাচার তেঁই ব্যাতিক্রম।। রাজনীতি ধর্ম্ম কত আছয়ে সংসারে। সব ত্যাজি ভ্রমি মৃগবধ অনুসারে।। সমুচিত ফল তার হৈল এত কালে। খণ্ডন না হয় কর্ম্ম অনুসারে ফলে।। আজি হ'তে ত্যাজিলাম সংসার বিষয়। শরীর ত্যাজিব তপ করিয়া আশ্রয়।। একাকী হইয়া পৃথ্বী করিব ভ্রমণ। সকল ইন্দ্রিয়গণ করিব দমন।। কুন্তী মাদ্রী প্রতি রাজা বলিছে বচন। হস্তিনানগরে দোঁহে করিল গমন।। বিদুর প্রভৃতি যত সুহৃদ সকল। যে দেখিলা শুনিলা কহিবে অবিকল।। এত শুনি দুইজনে করেন ক্রন্দন। কান্দিতে কান্দিতে কহে করুণ বচন।। নিশ্চয় নৃপতি যদি না লবে সংহতি। ক্ষণেক রহিয়া যাও শুন নরপতি।। আমরা তোমার অগ্রে প্রবেশি আগুনে। তারপর যেথা ইচ্ছা যাও সেই স্থানে।। অনেক বিনয় করি কান্দে দুইজন। দেখিয়া ব্যাকুল পাণ্ডু নৃপতি তখন।। বলিলেন নিশ্চয় সহিত যদি যাবে। তোমরা অশেষ ক্লেশ অরণ্যেতে পাবে।। গাছের বাকল পর ত্যাজহ বসন। শিরে জটা ধর আর ত্যাজ আভরণ।। ফলমূলাহারী হও ত্যাজ দিব্য হার। লোভ মোহ কাম ত্যাজ ক্রোধ অহঙ্কার।। স্বামীর বচন তবে শুনি দুইজন। ততক্ষণে পরিত্যাগ করে আভরণ।। কেশপাশে করিল মস্তকে জটাভার। নৃপতির অগ্রে দিল সব অলঙ্কার।। দেখিয়া নৃপতি মনে হইল বিস্ময়। দেখিয়া দোহারে বেশ বিদরে হৃদয়।। তবে রাজা ত্যাজিলেন নিজ অলঙ্কার। করিয়া সকল ত্যাগ তপস্বী আচার।। রত্ন অলঙ্কার দ্বিজে করিলেন দান। তপস্যা করিতে রাজা করেন প্রস্থান।। অনুচরগণ যত আছিল সংহতি। সবাকারে বলিলেন পাণ্ডু নরপতি।।