পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/১০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সৃণিভির্যার্ম্যসৌম্য্যোঃ

 হস্তিনা-নগরে সবে করহ গমন।
 সবাকারে কহিবে আমার বিবরণ।।
 পাণ্ডুর বচন এত শুনি সর্ব্বজন।
 হাহাকার শব্দে করে সকলে ক্রন্দন।।
 সঘনে নিশ্বাস মুখে করুণ বচন।
 হস্তিনানগরে সবে করিল গমন।।
 একে একে সবারে কহিল সমাচার।
 শুনি পুরলোক সব করে হাহাকার।।
 অন্তঃপুরে উঠিল ক্রন্দন মহারোল।
 প্রলয়ের কালে যেন সাগর কল্লোল।।
 গাঙ্গেয় বিদুর আদি আর যত জন।
 পাণ্ডুর শোকেতে সব করয়ে ক্রন্দন।।
 শুনি ধৃতরাষ্ট্র রাজা অত্যন্ত অস্থির।
 নাহি রুচে অন্ন জল না হন বাহির।।
 রত্নময় পালঙ্ক ছাড়িয়া নরবর।
 ভূমে গড়াগড়ি যান শোকেতে কাতর।।
 হেনমতে রোদন করিছে বন্ধুগণ।
 হেথা পাণ্ডু প্রবেশ করিলান কানন।।
 চৈত্ররথ নামে বন অতি সে বিস্তার।
 গন্ধর্ব্ব অপ্সর তথা করিছে বিহার।।
 সে বন ত্যাজিয়া যায় নৈমিষ-কানন।
 বহু নদ নদী দেশ করিয়া লঙ্ঘন।।
 তিনজনে হিমালয় করি আরোহণ।
 তথা হৈতে চলিলেন শ্রীগন্ধমাদন।।
 তথায় আছয়ে ইন্দ্রদ্যুম্ন সরোবর।
 মহাপুণ্য তীর্থ যাহে বাঞ্ছিত অমর।।
 তাহে স্নান করিয়া গেলেন তিনজন।
 শতশৃঙ্গ পর্ব্বতে করেন আরোহণ।।
 মহা উচ্চ গিরিবর দেখিতে উত্তম।
 অনেক তপস্বী ঋষিগণের আশ্রম।।
 পর্ব্বত পাইয়া রাজা আনন্দিত মন।
 করেন তপস্যা তথা সহ ঋষিগণ।।
 করেন কঠোর তপ তথা তিনজন।
 দিনশেষে ফল মূল করন ভক্ষণ।।
 ঘোর তপ দেখিয়া বাখানে ঋষিগণ।
 তপস্যাতে সিদ্ধ হইলেন তিনজন।।
 স্বর্গেতে যাইতে শক্তি হৈল হেন বাসি।
 তথা হৈতে গেলেন প্রণমি যত ঋষি।।
 অতি উচ্চ গিরিবর পরশে গগন।
 স্বর্গেতে যাইতে করিলেন আরোহণ।।
 পথেতে দেখেন সব দেবতার স্থান।
 নানা রত্ন বিভূষিত বিচিত্র নির্ম্মাণ।।
 দেখেন গঙ্গার মধ্যে প্রবল তরঙ্গ।
 দেবকন্যা তথা করে ক্রীড়া রঙ্গ।।
 কোন স্থানে দেখিলেন পর্ব্বত উপর।
 জলধরগণে বৃষ্টি করে নিরন্তর।।
 তাহার অন্তরেতে অগম্য ভূমি দেখি।
 আছুক অন্যের কাজ যেতে নারে পাখী।।
 তিনজনে দেখিলান তথা ঋষিগণ।
 ডাক দিয়া ঋষিগণ বলেন বচন।।
 কোথাকারে যাও হে তোমরা তিনজন।
 অগম্য বিষম ভূমি যাহ কি কারণ।।
 ঋষিগণ বচনে বলেন নরপতি।
 পাণ্ডু নামে আমি কুরুবংশেতে উৎপত্তি।।
 অপুত্রক হইলাম নিজ কর্ম্মদোষে।
 সংসার ত্যাজিয়া আমি যাই স্বর্গবাসে।।
 চারি ঋণ লইয়া মনুষ্য দেহ ধরে।
 ঋণ হোইতে পার হৈলে মুক্ত কলেবরে।।
 যজ্ঞ করি দেবঋণে হইবেক পার।
 মুনিগণে তুষিবেক করি ব্রতাচার।।
 পিতৃঋণে মুক্ত হয় পিতৃপিণ্ড দিয়া।
 মনুষ্য হইবে পার অতিথি সেবিয়া।।
 ঋণে পার হইলাম আমি তিন স্থানে।
 সবে না পাইলাম পার পিতৃগণ-ঋণে।।
 আপন কুকর্ম্ম-ফল না হয় খণ্ডণ।
 শরীর ত্যাজিতে আমি যাই সে কারণ।।
 ঋষিগণ বলে তুমি পণ্ডিত সুজন।
 ধার্ম্মিক সুবুদ্ধি সর্ব্বশাস্ত্রে বিচক্ষণ।।
 পুত্রহীন জন স্বর্গে যাইতে না পারে।
 দ্বারপালগণ তথা দ্বার রক্ষা করে।।
 অকারণে তথাকারে যাও নরপতি।
 কদাচিত না পাইবা স্বর্গের বসতি।।