পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যথা ত্বং সস্থিরা কৃষ্ণে তথা ভব ময়ি স্থিরা ।

  দে চিন্তি দুর্য্যোধন করিল বিচার।
 ভীমেরে মাতিব হেন যুক্তি করে সার।।
 ভীম মারি চারি ভায়ে রাখিব বান্ধিয়া।
 তবেত ভুঞ্জিব রাজ্য নিষ্কণ্টক হৈয়া।।
 বালককালেতে করে এমত বিচার।
 যে কালে না করে লোকে হিংসা অহঙ্কার।।
 তবে ত অনুচরে ডাকি বলে দুর্য্যোধন।
 গঙ্গাতীরে আছে তথা গহন কানন।।
 তাহাতে বিচিত্র স্থল করহ নির্ম্মাণ।
 উত্তম বরণ ঘর কর স্থানে স্থান।।
 চর্ব্ব্য চোষ্য লেহ্য পেয় শকটে পূরিয়া।
 সকল গৃহের মধ্যে পুর্ণ কর গিয়া।।
 আজ্ঞামাত্র করে সব অনুচরগণ।
 সব ভ্রাতৃগণেরে ডাকিল দুর্য্যোধন।।
 আজি চল ভাই সব যাই গঙ্গাজলে।
 জলক্রীড়া করিব পরম কুতূহলে।।
 উত্তম বিহার করি আহার সহিতে।
 ভক্ষ্যদ্রব্য আছে সব প্রমাণ-কোটিতে।।
 শুনিয়া সম্মত হইলেন যুধিষ্ঠির।
 করিব সলিল ক্রীড়া চল গঙ্গাতীর।।
 পঞ্চোত্তর শত ভাই একত্র করিয়া।
 রথ গজ অশ্ব যানে আরোহণ হৈয়া।।
 প্রমাণকোটিতে করিল যে দুর্য্যোধন।
 একত্র হইয়া সবে আসনে বসিল।
 নানা দ্রব্য উপহার খাইতে লাগিল।।
 হেনকালে ক্রূর কূরুপতি দুর্য্যোধনে।
 দুষ্ট কালকূট দিল ভীমের বদনে।।
 পুনঃ পুনঃ তথিপর দিল উপহার।
 ভক্ষ্ণে সন্তূষ্ট বীর আনন্দ অপার।।
 কালকূট পান করিলেন বৃকোদর।
 দুর্য্যোধন হৈল বড় হরিষ-অন্তর।।
 তবে সব ভ্রাতৃগণ গেল গঙ্গাজলে।
 জলক্রীড়া আরম্ভিল মহা কুতূহলে।।
 কেহ উঠে কেহ ডুবে কেহ ফেলে জল।
 ক্রীড়ায় হইল হীন ভীম মহাবল।।
 জলক্রীড়া করি শ্রান্ত হৈল সর্ব্বজন।
 প্রমাণকোটিতে পুনঃ করিল গমন।।
 দিব্য বস্ত্র পিন্ধন ভূষণ অলঙ্কার।
 উপহার দ্রব্য যত করিল আহার।।
 রত্নময় পালঙ্কেতে করিল শয়ন।
 ক্রীড়াশ্রমে নিদ্রাগত হৈল সর্ব্বজন।।
 বিষেতে আবৃত ভীম হৈল অচেতন।
 সবে নিদ্রা গেল মাত্র জাগে দুর্য্যোধন।।
 অচেতন ভীমেরে দেখিয়া কুরুপতি।
 হস্তপদ বন্ধন করিল শীঘ্রগতি।।
 ধরিয়া ফেকে গঙ্গার অগাধ সলিলে।
 নাহিক শরীরে জ্ঞান জরিল গরলে।।
 ভাসিয়া চলিল বীর স্রোতে বিপরীত।
 নাগের আলয়ে গিয়া হৈল উপনীত।।
 বিপুল শরীর দেখি বেড়ে নাগগণ।
 ক্রোধে চতুর্দ্দিকে সবে করিল দংশন।।
 নাশিল স্থাবর বিষ জঙ্গম বিষেতে।
 চেতন পাইয়া ভীম দেখে চতুর্ভিতে।।
 অবহেলে ছিঁড়ে কর-পদের বন্ধনে।
 মুষ্টাঘাতে প্রহারে যতেক নাগগণে।।
 ভীমের মুষ্টিকাঘাত বজ্রের সমান।
 পলায় সকল নাগ লইয়া পরাণ।।
 বসুকির অগ্রে গিয় করে নিবেদন।
 নাগকুল নাশিল মনুষ্য একজন।।
 মনুষ্যের আচরণ না দেখি তাহার।
 অনুমানে বুঝি ইন্দ্র নর-অবতার।।
 বন্ধনেতে ছিল হেতা আইল ভাসিয়া।
 ক্রোধে সব নাগগণে ফেলিল মারিয়া।।
 অচেতন ছিল পূর্ব্বে হইল চেতন।
 সবে পলাইল শুনি তাহার গর্জ্জন।।
 ভীম পরাক্রমে বীর আছে সেই স্থানে।
 দিব্যচক্ষু বাসুকী জানিল ততক্ষণে।।
 পবন-ঔরসে জন্ম কুন্তীর নন্দন।
 মধুর বচনে ভীমে করে সম্ভাষণ।।