এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
ঈশ্বরী-কমলে লক্ষ্মী-শ্চলা ভূতির্হরি প্রিয়া।।
আমার নাতির নাতি হও বৃকোদর। কি করিব তব প্রিয় করহ উত্তর।। ধন রত্ন লহ তুমি যাহা লয় মনে। এত শুনি বলিল যতেক নাগগণে।। তোমার পরম বন্ধু যদি এ কুমার। ভোক্ষ্য ভোজ্য দিয়া প্রীতি জন্মাও ইহার।। ধন রত্নে ইহার নাহিক প্রয়োজন। ইহার পরম প্রীতি পাইলে ভক্ষণ।। এত শুনি ফনিরাজ লৈয়া বৃকোদরে। গৃহমধ্যে বসাইল পালঙ্ক উপরে।। নাগের আলয়ে আছে সুধাকুণ্ডগণ। ভীমে বলে কর পান যত লয় মন।। সহস্র হস্তীর বল এক কুণ্ড পানে। যত ইচ্ছা তত পান করহ এক্ষণে।। একে বৃকোদর, তাহে পরিশ্রম ক্ষুধা। তাহে লোভী পাইল অপূর্ব্ব কুণ্ডসূধা।। একে একে অষ্ট কুণ্ড পান যে করিল। চলিতে নাহিক শক্তি উদর পূরিল।। হেথা সবে গৃহে যেতে করিল বিচার। রথে অশ্বে গজে উঠে চড়ে যে যাহার।। ভ্রাতৃগণে ডাকিয়া কহেন যুধিষ্ঠির। সবে আছি কেবল না দেখি ভীমবীর।। ফল হেতু ভীম কিবা গিয়াছে কাননে। গঙ্গাজলে গেল কিবা বিহার কারণে।। ভীমের উদ্দেশ কর ভাই সর্ব্বজন। চতুর্দ্দিকে ভ্রাতৃগণ গেল ততক্ষণ।। কেহ গেল গঙ্গাতীরে কেহ মধ্যভাগে। ভীম ভীম বলি কেহ ডাকে চতুর্দ্দিকে।। না পাইয়া বাহিড়িল সব ভ্রাতৃগণ। ভীমেরে না পাই ভাই বলে সর্ব্বজন।। যুধিষ্ঠির হইলেন বিরস-বদন। কোথাকারে গেল ভীম না জানি কারণ।। কেহ বলে বৃকোদর ছিল এইক্ষণ। কেহ বলে অগ্রে ঘর করিল গমন।। অসন্তুষ্ট যুধিষ্ঠির উঠিয়া সত্বর। গৃহে গিয়া দেখেন জননী একেশ্বর।। মায়ে দেখি জিজ্ঞাসেন ধর্ম্মের কুমার। গৃহে আসিয়াছে মাতা ভাই বৃকোদর।। গৃহের মধ্যেতে নাহি দেখি কি কারণে। কিবা কোথা পাঠাইলে বুঝি অনুমানে।। ভীমে না দেখিয়া মম স্থির নহে মতি। ভীমের কুশল মাতা কহ শীঘ্রগতি।। জল স্থল দেখিলাম কানন নগর। কোথাও না পাইলাম ভাই বৃকোদর।। শুনিয়া বিষণ্ণমনা হ'য় ভোজসুতা। বলিলেন ভীম নাহি আইসেন হেথা।। কোথাকারে ভীম তবে করিল গমন। শীঘ্র গিয়া তল্লাসিয়া আন পুত্রগণ।। আইল বিদুর তবে কুন্তীর আদেশে। বিদুরে কহেন কুন্তী গদগদ ভাষে।। ভাই সহ গেল ভীম ক্রীড়ার কারণে। সবে আসে বৃকোদর না আসে কেনে।। দুষ্ট দুর্য্যোধন তারে দেখিতে না পারে। ক্রূরমতি নির্লজ্জ সে মারিয়াছে তারে।। নিশ্চয় মারিল ভীমে করিয়া মণ্ত্রনা। হৃদয় অস্থির, চিত্তে হইল যন্ত্রণা।। বিদুর কহিল কুন্তী এ কথা না কহ। আর চারি পুত্রের জীবন যদি চাহ।। দুষ্ট্মতি দুর্য্যোধন বড় দুরাচার। ছিদ্রকথা শুনিলে করিবে অবিচার।। এত শুনি কুন্তীদেবী করেন ক্রন্দন। ভূমে গড়াগড়ি যায় ভাই চারিজন।। ভীমের শোকেতে বড় পাইয়া সন্তাপ। অধোমুখে কান্দে তবে করিয়া বিলাপ।। ব্যাসের বচন তুমি ভুলিলা এখন। পৃথিবীতে অবধ্য পাণ্ডব পঞ্চজন।। ব্যাসের বচন কুন্তী কভু মিথ্যা নয়। এখনি আসিবে ভীম নাহিক সংশয়।। এত বলি প্রবোধিয়া গেল নিজ ঘর। শোকাকুল অতি রয় চারি সহোদর।। হেথা নাগলোকে নিদ্রা যায় বৃকোদর। নিদ্রা ভঙ্গ হইল অষ্ট দিবস অন্তর।।