এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
সরস্বতীর ধ্যান মন্ত্র--তরুণ শকলমিন্দোর্বিভ্রতী শুভ্রকান্তিঃ
অনেক বিনয়ে বল্র নিষাদ নন্দন। তথাপি তাহারে না করান অধ্যয়ণ।। দ্রোণাচার্য্য-মুখে যবে নিষ্ঠুর শুনিল। দণ্ডবৎ করিয়া অরণ্যে প্রবেশিল।। নিষাদের বেশ ত্যাজি হৈল ব্রম্ভচারী। জটাবল্ক পরিধান ফল-মূলাহারী।। মৃত্তিকার দ্রোণ এক করিয়া গঠন। নানা পুষ্প দিয়া তাঁরে করয়ে পূজন।। নিরন্তর একলব্য হাতে ধনুঃশর। সর্ব্ব মন্ত্র অস্ত্র জ্ঞাত হৈল ধনুর্দ্ধর।। তবে কতদিন পরে কৌরব-নন্দন। সেই বনে গেল সবে মৃগয়া কারণ।। কেহ রথে কেহ গজে কেহ তুরঙ্গমে। সঙ্গেতে চলিল ভ্রাতৃগণ ক্রমে ক্রমে।। মৃগয়ানিপুন গুণী লইয়া সংহতি। মহাবনে প্রবেশ করিল শীঘ্রগতি।। মৃগয়া করিছে যত রাজার কুমার। হেনকালে পাণ্ডবের এক অনুচর।। করিয়া কুকুর সঙ্গে যায় পিছে পিছে। উত্তরিল যথায় নিষাদ-পুত্র আছে।। মৃত্তিকা পুত্তলি অগ্রে করি যোড়কর। বসিয়াছে ব্রম্ভচারী হাতে ধনুঃশর।। শব্দ করে কুকুর দেখিয়া ব্রম্ভচারী। চারিভিতে ভ্রমে তারে প্রদক্ষিণ করি।। কুকুরের শব্দে আর ভাঙ্গিলেক ধ্যান। ক্রোধে কুকুরের মুখে মারে সপ্তবান।। না মরিল কুকুর না হইল মুখে ঘা। অলক্ষিতে কুকুরের রোধিলেক রা।। কুকুর নিঃশব্দ হৈল মুখে সপ্ত শর। কতক্ষণে গেল তবে কুমার গোচর।। কুকুরের মুখে শর আশ্চর্য্য দেখিয়া। জিজ্ঞাসিল অনুচরে বিস্মিত হইয়া।। এ হেন অদ্ভুত কর্ম্ম কভু নাহি শুনি। বহু শিক্ষা জানি এই বিদ্যা নাহি জানি।। লজ্জায় মলিন হৈল যত ভ্রাতৃগণ। চল যাই দেখিব বিন্ধিল কোন জন।। অনুচর লৈয়া যায় যথা ব্রম্ভচারী। দেখিল বসিয়া আছে ধনুঃশর ধরী।। জিজ্ঞাসিল তুমি হও কোন মহাজন। কার স্থানে এ বিদ্যা করিলে অধ্যয়ণ।। ব্রম্ভচারী বলে মম একলব্য নাম। অস্ত্রশিক্ষা করিলাম দ্রোণ গুরুস্থান।। শুনিয়া বিস্ময় মানে যতেক কুমার। অর্জ্জুন শুনিয়া চিন্তা করেন অপার।। মৃগয়া সংবরি তবে যত ভ্রাতৃগণ। দ্রোণস্থানে করিলেন সব নিবেদন।। বিনয়ে কহেন পার্থ বিরস-বদন। আমারে আপনি কেন করিলা বঞ্চন।। পূর্ব্বেতে আমার প্রতি ছিল অঙ্গীকার। তব সম প্রিয় শিষ্য নাহিক আমার।। তোমার সদৃশ বিদ্যা নাহি দিব কারে। এখন ছলনা প্রভু করিলা আমারে।। পৃথিবীতে যেই বিদ্যা কেহ নাহি জানে। হেন বিদ্যা শিখাইলে নিষাদ-নন্দনে।। অর্জ্জুনের বাক্যে দ্রোণ মানিয়া বিস্ময়। ক্ষণেক নিঃশব্দে চিন্তা করেন হৃদয়।। অর্জ্জুনেরে বলেন সে আছে কোন স্থানে। শীঘ্রগতি চল তথা যাব দুই জনে।। দ্রোণ আর অর্জ্জুন করিলেন গমন। দ্রোণে দেখি ত্বরা উঠি নিষাদ-নন্দন।। দূরে থাকি ভূমে লুঠি প্রণাম করিল। কৃতাঞ্জলি হইয়া অগ্রেতে দণ্ডাইল।। নিষাদ-নন্দন বলে মধুর বচন। আজ্ঞা কর গুরু হেথা কোন্ প্রয়োজন।। দ্রোণ বলিলেন যদি তুমি শিষ্য হও। তবে গুরুদক্ষিণা আমারে আজি দাও।। একলব্য বলে প্রভু মম ভাগ্যবশে। কৃপা করি আপনি আইলা এই দেশে।। এ দ্রব্য সে দ্রব্য নাহি করহ বিচার। সকল দ্রব্যেতে হয় গুরু অধিকার।। যে কিছু মাগিবা প্রভু সকলি তোমার। আজ্ঞা কর গুরু করিলাম অঙ্গীকার।।