এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
কুচভর-নমিতাঙ্গী সন্নিষণ্ণা সিতাজ্বে।।
দ্রোণ বলিলেন যদি আমারে তূষিবে। দক্ষিণ হস্তের বৃদ্ধ অঙ্গুলিটি দিবে।। ততক্ষণে কাটিয়া অঙ্গুলি গোটা দিল। গুরুর আজ্ঞায় সে বিলম্ব না করিল।। তুষ্ট হইলেন দ্রোণ আর ধনঞ্জয়। মনে জানিলেন গুরু আমারে সদয়।। তাহার কঠোর কর্ম্ম দেখি দুইজন। প্রশংসা করিয়া দেশে করিল গমন।। তবে কতদিনে দ্রোণ বিদ্যা পরীক্ষিতে। কাষ্ঠের রচিয়া পক্ষী রাখিল বৃক্ষেতে।। একে একে ডাকিলেন সব শিষ্যগণে। আইলেন যুধিষ্ঠির অগ্রে সেইক্ষণে।। ধনুঃশর দিয়া দ্রোণ যুধিষ্ঠির করে। ভাস পক্ষী দেখাইয়া কহেন তাহারে।। ওই দেখ ভাস পক্ষী বৃক্ষের উপর। উহারে করিয়া লক্ষ্য ধর ধনুঃশর।। যেইক্ষণে মম আজ্ঞা হইবে বাহির। সেইক্ষণে কাটিবা উহার তুমি শির।। এত শুনি ধনুঃশর যুড়ি যুধিষ্ঠির। ভাসপক্ষী পানে দৃষ্টি করিলেন স্থির।। ডাকি বলিলেন দ্রোণ কুন্তীর কুমারে। কোন্ কোন্ জনে তুমি পাও দেখিবারে।। ধর্ম্ম বলিলেন ভাস দেখি বৃক্ষোপরে। ভূমিতে তোমারে দেখি আর সহোদরে।। এত শুনি দ্রোণ তাঁরে অনেক নিন্দিয়া। ছাড় ছাড় বলি ধনু নিলেক কাড়িয়া।। দুর্য্যোধন শত ভাই বীর বৃকোদর। একে একে সবারে দিলেন ধনুঃশর।। যেইরূপ কহিলেন ধর্ম্মের নন্দন। সেইমত কহিল সকল ভ্রাতৃগণ।। সবাকারে বহু নিন্দা করি দ্রোণ বীর। ধনু লৈয়া ঠেলা মারি করেন বাহির।। ধনুঃশর দেন গুরু অর্জ্জুনের হাতে। বৃক্ষে ভাস দেখাইয়া কহেন অগ্রেতে।। নির্গত হইবা মাত্র মম মুখে বাণী। নিঃশব্দে করিবা বাপু ভাসপক্ষী হানি।। গুরুবাক্যে তখনি টানিয়া ধনুর্গুণ। পক্ষী প্রতি দৃষ্টি করি রহেন অর্জ্জুন।। কতক্ষণ থাকি দ্রোণ বলেন অর্জ্জুনে। কোন কোন জন তুমি দেখহ নয়নে।। অর্জ্জুন বলেন আমি অন্য নাহি দেখি। বৃক্ষমধ্যে শুধু দেখিবারে পাই পক্ষী।। হৃষ্ট হইয়া দ্রোণ পুণঃ বলেন বচন। কিরূপ ভাসের অঙ্গ কর নিরীক্ষণ।। অর্জ্জুন বলেন আর ভাস নাহি দেখি। কেবল দেখি যে মুণ্ডসহ দুই আঁখি।। দ্রোণ বলিলেন অস্ত্রে কাট পক্ষি-শির। না স্ফুরিতে বাক্য মাত্র কাটে পার্থবীর।। দ্রোণাচার্য্য নিরখিয়া হরষিত মন। আলিঙ্গিয়া পুনঃ পুনঃ করেন চুম্বন।। প্রশংসা করেন দ্রোণ অর্জ্জুনে অপার। দেখি চমৎকার হৈল সকল কুমার।। তবে একদিন দ্রোণ যান গঙ্গাস্নানে। সঙ্গেতে করিয়া লইলেন শিষ্যগণে।। জলেতে নামিল গুরু শিষ্যগণ তটে। কুম্ভীর ধরিল তাঁরে দশন বিকটে।। শক্তিসত্বে মুক্ত নাহি হইয়া আপনে। ডাক দিয়া বলিলেন সব শিষ্যগণে।। আমারে কুম্ভীরে ধরি ল'য়ে যায় জলে। এই ডুবাইল, রাখ আমারে সকলে।। দ্রোণের বচনে সবে হইল চমৎকার। আস্তে ব্যস্তে ল'য়ে যায় অস্ত্র যে যাহার।। দ্রোণের মুখেতে তবে নাহি সরে বাণী। অলক্ষিতে পঞ্চবান মারিল ফাল্গুনী।। খণ্ড খণ্ড হইল কুম্ভীর-কলেবর। মরিল কুম্ভীর ভাসে জলের উপর।। জল হৈতে উঠি দ্রোণ ধরিল অর্জ্জুনে। বার বার তুষিলান চুম্ব আলিঙ্গনে।। তুষিয়া দিলেন অস্ত্র নাম ব্রহ্মশির। অস্ত্র দিয়া বলিলেন দ্রোণ মহাবীর।। এই অস্ত্র প্রহারিবা দেবতা রাক্ষসে। কদাচিত অস্ত্র নাহি ছাড়িবা মানুষে।।