এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
নিজকর-কমলোদ্যল্লেখনী-পুস্তক শ্রীঃ।
দেখিয়া গুরুর এত অর্জ্জুনে সম্মান। ক্রোধে দুর্যোধন রহে মরণ সমান।। হেনমতে দ্রোণাচার্য্য সব শিষ্যগণে। নানা বিদ্যা শিক্ষা করাইলেন যতনে।। রথ আরোহণে দৃঢ় হন যুধিষ্ঠির। গদায় কুশল দুর্যোধন ভীম বীর।। তুরঙ্গে নকুল হৈল সহদেব কুন্ত। হেনমতে সবে হইলেন বিদ্যাবন্ত।। ইন্দ্রের নন্দন পার্থ অনুজ সমান। সকল বিদ্যায় পূর্ণ হইল বাখান।। মহাভারতের কথা অমৃত সমান। কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান।। ------ রাজার নিকট অস্ত্র পরীক্ষা। সব শিষ্যগণ যবে হইল প্রখর। দ্রোণ চলিলেন যথা অন্ধ নৃপবর।। ভীষ্ম কৃপাচার্য্য আদি যত ক্ষত্রগণ। সভাতে কহেন ভরদ্বজের নন্দন।। বিদ্যায় পারগ হৈল সকল কুমার। সাক্ষাতে পরীক্ষা কর বিদ্যা সবাকার।। এত শুনি ধৃতরাষ্ট্র আনন্দিত মন। বিদুরে ডাকিয়া আজ্ঞা করেন তখন।। রঙ্গভূমি সজ্জাদি করহ শীঘ্রগতি। যেইরূপ আচার্য্য কহেন মহামতি।। রাজ-আজ্ঞা পাইয়া বিদুর ততক্ষণে। আদেশ করেন যত অনুচরগণে।। যে স্থান প্রশস্ত চারি দিকেতে সোসর। রঙ্গভূমি বিরচিল তাহার ভিতর।। চতুর্দ্দিকে নির্ম্মাইল উচ্চ গৃহগণ। নান রত্নে গৃহ সব করিল মণ্ডন।। রাজগণ বসিবারে তথির উপর। বিচিত্র পালিঙ্ক শয্যা থুইল বিস্তর।। রাজনারীগণ হেতু কৈল ভিন্ন স্থল। জল হেতু মঞ্চ নির্ম্মাইল সুকোমল।। হেনমতে রঙ্গভূমি করিয়া নির্ম্মাণ। বিদুর জানাইল সে ধৃতরাষ্ট্র-স্থান।। শুভদিন করিয়া চলিল সর্ব্বজন। কৃপাচার্য্য ধৃতরাষ্ট্র গঙ্গার নন্দন।। বাহ্লীক চলিল সহ পুত্র সোমদত্ত। আর যত রাজগণ আসে শত শত।। গান্ধারীর সুতা আর কুন্তী আদি করি। আইল সকল যত অন্তঃপুর-নারী।। রথ গজ অশ্বপৃষ্ঠে মঞ্চের উপরে। লক্ষপুর করিয়া রহিল দেখিবারে।। নানা বাদ্য বাজে সদা কর্ণে লাগে তালি। প্রলয়কালেতে যেন সিন্ধুর কল্লোলি।। আইলেন তখন আচার্য্য মহাশয়। তারা মধ্যে হ'ল যেন চন্দ্রের উদয়।। শুল্কবাস শুক্লবেশ শুষ্কপুষ্পমালে। সর্ব্বাঙ্গে লেপিত শুক্ল মলয়জ ভালে।। পুত্রসহ গুরু দাণ্ডাইল সভামাঝে। কহিলেন আসিবারে পাণ্ডব অগ্রজে।। সভাতে প্রবেশ করিলেন যুধিষ্ঠির। বিকচ-পঙ্কজ মুখ নির্ম্মল শরীর।। টঙ্কারিয়া ধনুর্গুণ সন্ধি দিব্য শর। মহাশব্দে প্রহারিল লোকে ভয়ঙ্কর।। এক অস্ত্র বহু অস্ত্র করেন সৃজন। বায়ব্য অনল আদি বহু অস্ত্রগণ।। ধন্য ধন্য করি সবে করিল আখ্যান। সবে বলে কেহ নাহি ইহার সমান।। নিবর্ত্তিয়া যুধিষ্ঠিরে তপোধন দ্রোণ। আজ্ঞা করিলেন এস ভীম দুর্য্যোধন।। গদা হাতে করিয়া আইসে দুইবীর। মল্লবেশে রঙ্গমাটি ভূষিত শরীর।। মাথায় মুকুট পরিধান বীরধড়া। দুই ভিতে দোঁহে যেন পর্ব্বতের চূড়া।। গদা হাতে করি দোঁহে করিয়া মণ্ডলী। দোঁহার হুঙ্কার শব্দে কর্ণে লাগে তালি।। দুই মত্ত গজ যেন শুণ্ডে জড়াজড়ি। চরণে চরণে মুণ্ডে মুণ্ডে তাড়াতাড়ি।। দোঁহার দেখিয়া কর্ম্ম লোকে ভয়ঙ্কর। অন্যে অন্যে কথা হয় সভার ভিতর।।