পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/১৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সরস্বতি মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।

 এত বলি ব্যাঘ্র প্রবেশিল ঘোর বনে।
 ততক্ষনে মুষিক আইল সেই স্থানে।।
 মুষিকে দেখিয়া তবে যুড়িল ক্রন্দন।
 এস, সখা তোমা করি আলিঙ্গন।।
 সখা হেন নকুলের হইল কুমতি।
 ছাড়িত নারিল সখা আপন প্রকৃতি।।
 আচম্বিতে সর্পসঙ্গে হৈল তার দেখা।
 যুদ্ধে হারি তার কাছে হৈল তার সখা।।
 স্নান করি এখানে আইল দুইজন।
 সর্পেরে দিলেক মাংস করিতে ভক্ষণ।।
 পঞ্চজন মিলিয়া মারিলাম যে মৃগী।
 এখন নকুল আনে আর এক ভাগী।।
 দুইজন মিলি গেল তোমা খুঁজিবারে।
 এথা এলে ধরিও বলিয়া গেল মোরে।।
 এত শুনি মুষিকের উড়িল পরাণ।
 অতি শীঘ্র পলাইয়া গেল অন্য স্থান।।
 হেনকালে নকুল আসিয়া উপনীত।
 ক্রোধে শিবা কহে তারে সময় উচিত।।
 সিংহ আদি তিন জন করিল সমর।
 হারিয়া আমার যুদ্ধে গেল বনান্তর।।
 তোর শক্তি থাকে যদি আসি কর রণ।
 নহিলে পলাও তুমি লিয়া জীবন।।
 সহজে নকুল ক্ষুদ্র শিবা বলবান।
 বিনা যুদ্ধে পলাইয়া গেল অন্য স্থান।।
 কণিক বলিল রাজা কর অবধান।
 এমত করিলে রাজা হয় রাজ্যবান।।
 বলিষ্ঠে বুদ্ধিতে জিনি মারিবেক বলে।
 লুব্দ্ধজনে ধন দিয়া মারিবেক ছলে।।
 শত্রুরে পাইয়া রাজা কভু না ছাড়িবে।
 জন্মাইয়া বিশ্বাস বিপক্ষে সংহারিবে।।
 জানিবেক শত্রু মম জীবনের বৈরী।
 তাহারে মারিবে আনিয়া দিব্য করি।।
 বিশ্বাসিয়া দিব্য করি মারে শত্রু সব।
 নাহিক ইহাতে পাপ কহেন ভার্গব।।
 শত্রুরে পালন করি করিয়া বিশ্বাস।
 খচ্চরী জন্মিলে যেন গর্ভের বিনাশ।।
 এ সব বুঝিয়া রাজা করহ উপায়।
 এবে না করিলে শেষে দুঃখ পাবে রায়।।
 এত বলি কণিক চলিল নিজ ঘর।
 চিন্তিতে লাগিল মনে অন্ধ নৃপবর।।
 পূণ্যকথা ভারতের শুনিলে পবিত্র।
 কাশীরাম দাস কহে অদ্ভুত-চরিত।।
       --------
   পাণ্ডবদিগের বারাণাবতে গমন।
   যুধিষ্টির যুবরাজ সুখী সর্ব্বজন।
 স্থানে স্থানে  বিচার করয়ে প্রজাগণ।।
 ধর্ম্মশীল যুধিষ্টির দয়ার সাগর।
 পুত্রভাবে দেখে রাজা অমাত্য কিঙ্কর।।
 যুধিষ্টির রাজা হৈলে সবে থাকে সুখে।
 রাজার নন্দন রাজ্য সম্ভবে তাহাকে।।
 ভীষ্ম রাজা নহিলেন সত্যের কারণ।
 ধৃতরাষ্ট্র না হইল অন্ধ দ্ব-নয়ন।।
 বিশেষ রাজার যোগ্যপাত্র যুধিষ্টির ।
 সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয় সুবুদ্ধি সুধীর।।
 চলহ যাইয়া, প্রজা আছি যে যতেক।
 যুধিষ্টিরে রাজা করি, করি অভিষেক।।
 হাট বাট নগর চত্তরে এই কথা।
 দুর্য্যোধনে শুনিয়া জন্মিল বড় ব্যাথা।।
 বিরস বদনে গেল পিতার গোচর।
 দেখিল জনক রাজা ব'সে একেশ্বর।।
 সকরুণে পিতারে বলয়ে দুর্য্যোধন।
 অবধান কর রাজা বলে প্রজাগণ।।
 অবজ্ঞায় অনাদর করিল তোমারে।
 পতি ইচ্ছা করে সবে কুন্তীর কুমারে।।
 এইমত বিচার করয়ে সর্ব্বজন।
 রাজপুত্র যুধিষ্টির হইবে রাজন।।
 তাহার নন্দন হৈলে সেই হবে রাজা।
 আমা সবাকারে আর না গণিবে প্রজা।।
 অকারণে হই আমি পরভাগ্যজীবী।
 অকারণে আমারে ধরিল এ পৃথিবী।।
 পুত্রের শুনিয়া রাজা এতেক বচন।
 হৃদয়ে বাজিল শেল চিন্তিত রাজন।।