এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
শ্বেতাম্বরাধরা নিত্যা,শ্বেতগন্ধানুলেপনা।।
এত বলি কান্দে যত নগরের লোক। পাণ্ডবের গুণ স্মরি করে বহু শোক।। জননী সহিত হেথা পান্ডুর নন্দন। সুরঙ্গে বাহির হৈয়া প্রবেশিল বন।। ঘোর অন্ধকার নিশা গহন কানন। লতা বৃক্ষ কণ্টকেতে যায় ছ্য় জন।। চলিতে অশক্ত কুন্তী ধর্ম্ম যুধিষ্ঠির। ধনঞ্জয় মাদ্রীপুত্র কোমল শরীর।। কতদুর গিয়া কুন্তী হন অচেতন। শীঘ্রগতি যাইতে না পারে পঞ্চ জন।। তবে বৃকোদর নিল মায়ে স্কন্ধে করি। দুই স্কন্ধে মাদ্রীপুত্র হস্তে দোঁহা ধরি।। বায়ুবেগে যান ভীম সহ পঞ্চজনে। বৃক্ষ শিলা চূর্ণ হয় ভীমের চরণে।। অতি শীঘ্রগতি যায় ভীম মহাবীর। নিশাযোগে উত্তরিল জাহ্নবীর তীর।। গভীর গঙ্গার জল অতি সে বিস্তার। দেখি হৈল চিন্তিত কেমনে হৈব পার।। চিন্তিত ভোজেরে পুত্রী পঞ্চ সহোদর। গঙ্গাজল পরিমান করে বৃকোদর।। হেনকালে দিব্য এক আইল তরণী। পবন গমন তাহে শোভে পতাকিনী।। নৌকায় কৈবর্ত্ত বিদুরের অনুচর। না জানিয়া পঞ্চ ভাই চিন্তিত অন্তর।। দূরে থাকি কৈবর্ত্ত করিল নমষ্কার। কহিতে লাগিল বিদুরের সমাচার।। আমারে পাঠায়ে দিল পরম যতনে। তোমা সবা পার করিবারে নৌকাসনে।। অবিশ্বাসী নহি আমি বিদুরের জন। সঙ্কেতে আমারে পাঠাইল সে কারণ।। যখন আইলা সবে বারণানগর। ম্লেচ্ছভাষে তোমারে সে কহিল উত্তর।। যাহে জন্ম তাহে ভক্ষ্য শীতল বিনাশে। ইহার আছয়ে ভয় যাহ সেই দেশে।। এই চিহ্ন বলি মোরে আসিবার কালে। পাঠাইল করিবারে পার গঙ্গাজলে।। তাহার বচন শুনি বিশ্বাস জন্মিল। ছয় জন গিয়া, নৌকা আরোহণ কৈল।। চালাইলা নৌকা তবে পবন গমনে। পুনরাপি কহে দাস বিদুর বচনে।। বিদুর কহিল এই করুণ বচন। হেথা থাকি শিরে ঘ্রাণ করি আলিঙ্গন।। কিছুকাল অজ্ঞাতে বঞ্চহ কোন স্থান। দুঃখ ক্লেশ সহি কর কালের হরণ।। এই কথা কহিতে হইল গঙ্গাপার। কূলে উঠিলেন সবে পাণ্ডুর কুমার।। বলেন কৈবর্ত্ত প্রতি ধর্ম্মের নন্দন। বিদুরে কহিবে গিয়া এই নিবেদন। বিষম প্রমাদ হৈতে সবে হৈনু পার।। তোমা হৈতে পাণ্ডবের বন্ধু নাহি আর।। তোমার উপায় হেতু রহিল জীবন। পুনঃ ভাগ্য হইলে হইবে দরশন।। এত বলি কৈবর্ত্তে করিল মেলানি। বনেতে প্রবেশ কৈল প্রভাত রজনী।। গঙ্গার দক্ষিণে যান কুন্তীর নন্দন। উত্তরে বহিয়া নৌকা গেল সে তখন।। এখানে প্রভাত হৈলে নগরের লোক। জতুগৃহ নিকটে আসিয়া করে শোক।। জল দিয়া নিভাইল যে ছিল অনল। ভস্ম উলটিয়া সবে নিরিখে সকল।। দ্বারমধ্যে দেখিল পুড়িল পুরোচন। তাহার সুহৃদ যত ভাই বন্ধুগণ।। জতুগৃহ দ্বারে তবে গেল ততক্ষণ। দেখিল অনলে দগ্ধ আছে ছয় জন।। দেখিয়া সকল লোক হাহাকার করে। গড়াগড়ি দিয়া পড়ে ভূমির উপরে।। হায় হায় কোথা কুন্তী মাদ্রীর নন্দন। নিরখিয়া সর্ব্বলোক করয়ে ক্রন্দন।। এই কর্ম্ম করিল পাপিষ্ঠ দুর্য্যোধন। জতুগৃহ করিতে আইল পুরোচন।। দুষ্টবুদ্ধি ধৃতরাষ্ট্র সেও ইহা জানে। কপট করিয়া দগ্ধ কৈল পুত্রগণে।।