এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
শ্বেতাক্ষাসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চ্চিতা।
এই ক্ষণে আমা সবাকার এই কায। লোক পাঠাইয়া দেহ হস্তিনার মাঝ।। ধৃতরাষ্ট্রে বল না করিও কিছু ভয়। মনোবাঞ্ছা পূর্ণ তোর হলো দুরাশয়।। হস্তিনানগরে দূত গেল শীঘ্রগতি। জানাইল সমাচার অন্ধরাজ প্রতি।। জৌতুগৃহে ছিলেন কুন্তী পাণ্ডুর নন্দন। নিশাযোগে অগ্নি তাহে দিল কোন্ জন।। পুত্ত্রসহ কুন্তীদেবী হইল দাহন। পরিবারসহ দগ্ধ হৈল পুরোচন।। এত শুনি ধৃতরাষ্ট্র শোকে অচেতন। ক্ষণেক নিঃশব্দ হৈয়া করিল ক্রন্দন।। হাহা কুন্তী যুধিষ্ঠির ভীম ধনঞ্জয়। হাহা সহদেব আর নকুল দুর্জ্জয়।। বহুবিধ বিলাপ করয়ে অন্ধবর। সমাচার গেল অন্তঃপুরীর ভিতর।। গান্ধারী প্রভৃতি ছিল যত নারীগণ। শোকেতে আকুল সবে করয়ে ক্রন্দন।। ভীষ্ম দ্রোণ কৃপাচার্য্য বাহ্লীক বিদুর। পাণ্ডবের মৃত্যু শুনি শোকেতে আকুল।। নগরের সব লোক কান্দয়ে শুনিয়া। পাণ্ডবের গুণ সব হৃদয়ে স্মরিয়া।। কেহ ডাকে যুধিষ্ঠির কেহ বৃকোদর। কেহ ধনঞ্জয় কেহ মাদ্রীর কুমার।। হাহা কুন্তী বলি কেহ করয়ে ক্রন্দন। এই মত নগরে কান্দয়ে সর্ব্বজন।। তবে ধৃতরাষ্ট্র শ্রাদ্ধ করিল বিধান। ব্রাম্ভণেরে দিল বহুরত্ন ধেনু দান।। এথায় পাণ্ডবগণ ভুঞ্জি অতি ক্লেশ। হিরিম্বের অরণ্যেতে করিল প্রবেশ।। পথশ্রম আর ভয় ক্ষুধা তৃষ্ণা যত। কহেন ডাকিয়া কুন্তী প্রতি পঞ্চসুত।। বহুদুর আইলাম অরণ্য ভিতর। তৃষ্ণায় আকুল, নাহি চলে কলেবর।। যাইতে না পারি আর বিনা জলপানে। কতক্ষণ বিশ্রাম করহ এই স্থানে।। এত শুনি যুধিষ্ঠির বলেন বচন। না জানি মরিল কিবা জীয়ে পুরোচন।। দুষ্ট দুরাচার দুর্য্যোধনের মন্ত্রণা। এই সমাচার পাছে কহে কোন জনা।। তবে ত সাজিয়া সব আসিবে হেথায়। কি করিব তবে পুনঃ করহ উপায়।। ভীম বলে নিঃশব্দে থাকহ এইস্থানে। পশ্চাতে যাইব তৃপ্ত হৈল জলপানে।। অন্য সর্ব্বজনেরে রাখিয়া বটমূলে। জলে অন্বেষণে ভীম ভ্রমে নানা স্থলে।। জলচর শব্দ বীর শুনি কত দূরে। শব্দ অনুসারে গেল জল আনিবারে।। জলেতে নামিয়া ভীম কৈল স্নান পান। জল লইবারে ভীম নাহি পায় স্থান।। স্থল না পাইয়া ভীম বস্ত্র ভিজাইল। বসনে করিয়া জল লইয়া চলিল।। দুই ক্রোশ গিয়াছল জলের কারণ। ক্ষণমাত্রে পুনঃ এল পবন-নন্দন।। দেখিল সকলে নিদ্রাগত অচেতন। কহিতে লাগিল ভীম বিলাপ বচন।। বিচিত্র পালঙ্কোপরি শয্যা মনোহর। নিদ্রা নাহি হয় যাঁর তাহার উপর।। হেন মাতা গড়াগড়ি যায় ধরাতলে। হরি হরি বিধি হেন লিখিল কপালে।। কমল অধিক যার কোমল শরীর। হেন ভাই ভূমিতলে লোটায় শরীর।। তিন লোক ঈশ্বরের যোগ্য যেইজন। সহজ মানুষ প্রায় ভূমিতে শয়ন।। সুন্দর নকুল সহদেব অনুপম। বীর্য্যবন্ত বুদ্ধিমান সর্ব্বগুণধাম।। এরুপ দুর্গতি নাহি হয় কোন জনে। দুষ্টবুদ্ধি জ্ঞাতি দুর্য্যোধনের কারণে।। আপদে তরয়ে লোক জ্ঞাতির সহায়। বনে যেন বৃক্ষে বৃক্ষে বাতে রক্ষা পায়।।