এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
ইতি--পদ্মপুরাণে শ্রীসরস্বতী-স্তোত্রং সমাপ্তং।
এই কার্য্য বিনা অন্য নাহিক তাহার। বহুকালে মম প্রতি হয়েছে কড়ার।। এইরূপে বলি নাহি দেয় যেই জন। স্বকুটুম্ব সহ তারে করয়ে ভক্ষণ।। আজি তার পঞ্চক হইল মম ঘরে। কি করিব কি হইবে বাক্য নাহি সরে।। এই ভার্য্যা কন্যা পুত্র আছি চারিজনা। কারে দিব বলিদান করি যে ভাবনা।। মনুষ্য কিনিয়া দিব নাহি হেন ধন। সুহৃদ কুটুম্ব তরে নাহি হেন জন।। কারো মায়া তেয়াগিতে নারে কোন জন। সবে মিলি যাব ভাগ্য যা থাকে লিখন।। ব্রাম্ভণের এতেক কাতর বাক্য শুনি। সদয় হৃদয়া বলে ভোজের নন্দিনী।। ভয় ত্যাজ দ্বিজবর না কর ক্রন্দন। সকুটুম্ব যাবে কেন রাক্ষস-সদন।। পঞ্চপুত্র আছে মম শুন হে ব্রাম্ভণ। এক পুত্র দিব আমি তোমার কারণ।। দ্বিজ বলে কি প্রকারে করিব এ কর্ম্ম। লোকে অসম্ভব হবে মজিবেক ধর্ম্ম।। আত্মা দিয়া দ্বিজে রাখে বেদে হেন কয়। দ্বিজ দিয়া আত্মরক্ষা উচিত না হয়।। অজ্ঞানে ব্রাম্ভণ-বধে নাহি প্রতিকার। কি মতে করিব হেন কর্ম্ম দুরাচার।। কুন্তী বলিলেন যে কহিলা দ্বিজমনি। মম অগোচর নহে আমি সব জানি।। লোকের বেদনা মম না সহে পরাণে। বিশেষ ব্রাম্ভণ-দুঃখ সহিব কেমনে।। দ্বিজ বলে হেন বাক্য না বলিও মোরে। এ পাপ ভুঞ্জিব আমি যুগ-যুগান্তরে।। নিঃশব্দে বলেন কুন্তী শুন দ্বিজবর। আমার তনয়গণ মহাবলধর।। রাক্ষসে খাইবে হেন না ভাবিও মনে। রাক্ষস সংহার কৈল মম বিদ্যমানে।। বেদ-বিদ্যা-বুদ্ধিমান মম পুত্রগণ। পৃথিবীতে নাহিক জিনিতে কোন জন।। শত পুত্র থাকিলে কি পুত্র অনাদর। ভয় ত্যাজি অন্য বলি আনহ সত্বর।। কুন্তীর অদ্ভুত বাক্য শুনিয়া তখন। মৃতদেহে দ্বিজ যেন পাইল জীবন।। দ্বিজে সঙ্গে ল'য়ে কুন্তী করিল গমন। ভীমেরে জানাইলেন সব বিবরণ।। মায়ের বচনে ভীম করিল স্বীকার। হরিষে ব্রাম্ভণ গেল গৃহে আপনার।। কতক্ষণে আইলেন ভাই চারিজন। যুধিষ্ঠির শুনিলেন সব বিবরণ।। একান্তে ধর্ম্মের পুত্র ডাকিয়া মায়েরে। জিজ্ঞাসা করেন ভীম যাবে কোথাকারে।। তোমার সম্মত কিবা আপন ইচ্ছায়। কাহার বুদ্ধিতে হেন করিলা উপায়।। কুন্তী বলে আমার বচনে বৃকোদর। বিপ্রের কারণে আর রাখিতে নগর।। ধর্ম্ম কীর্ত্তি আছে ইথে নাহি অপযশ। আর ব্রাম্ভণের রক্ষা পরম পৌরষ।। এত শুনি যুধিষ্ঠির কহেন বিরস। কোন্ বুদ্ধে মাতা হেন করিলা সাহস।। এমন দুষ্কর নাহি শুনি ইহলোকে। মাতা হৈয়া পুত্রে দেয় রাক্ষসের মুখে।। ভিক্ষা মাগি প্রাণ রাখি যথাস্থানে বাস। পুনঃ রাজ্য পাব বলি যার বলে আশ।। যার ভূজবলে নিদ্রা না যায় কৌরবে। যার তেজে যতুগৃহে রক্ষা পাই সবে।। স্কন্ধে করি লৈল সবা হিড়িম্বক বনে। হিড়িম্বে মারিয়া কৈল সবার রক্ষণে।। আমরা বাঁচিব আর কিসের কারণে। হেন পুত্র দিলা তুমি রাক্ষস ভক্ষণে।। জননী হইয়া ইহা কেহ নাহি করে। বেদেতে নাহিক, নাহি সংসার ভিতরে।। রাজার দুহিতা তুমি রাজার নন্দিনী। বনবাসী হৈয়া তব হৈল বুদ্ধিহানী।। কুন্তী বলে যুধিষ্ঠির না ভাবিও তাপ। মম অগোচর নহে ভীমের প্রতাপ।।