এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
অন্যপুষ্পাঞ্জলির মন্ত্রঃ--সরস্বতৈঃ নমো নিত্যং ভদ্রকালৈ নমো নমঃ।।
জন্মকালে পরাক্রম দেখেছি তাহার। প্রসবিয়া নিতে শক্তি নহিল আমার।। কিছুমাত্র তুলি পুনঃ ফেলাইনু তলে। গিরিশৃঙ্গ চূর্ণ হৈল ভীমের আস্ফালে।। বারণাবতে তুমি দেখিলা নয়নে। চারি হস্তী তুল্য যে তোমরা চারিজনে।। আমা সহ সবারে লইল স্কন্ধে করি। হিড়িম্বা বরিল বনে হিড়িম্বে সংহারি।। ভীম-পরাক্রম পুত্র আমি জানি ভালে। রাক্ষস সংহার হবে ভীম-বাহুবলে।। উপস্থিত ভয়ে ত্রাণ করে যেইজন। তার সম পুণ্য বাপু না করি গণন।। বিশেষ গো-বিপ্র হেতু দিবে প্রান। আপনাকে দিয়া দ্বিজে করিবেক ত্রাণ।। রাজ্যরক্ষা দ্বিজরক্ষা আর যে পৌরষ। হেন কর্ম্মে কেন তুমি হইলে বিরস।। মায়ের এতেক নীতি শুনিয়া বচন। ধন্য ধন্য বলিলেন ধর্ম্মের নন্দন।। পরদুঃখে দুঃখী তুমি দয়ালু হৃদয়। তোমা বিনা হেন বুদ্ধি অন্যের কি হয়।। পরপুত্র-ত্রাণ হেতু নিজপুত্র দিলা। ব্রাম্ভণেরে এ সঙ্কটে রক্ষণ করিলা।। তোমার পুণ্যেতে মাতা তরিব বিপদে। রাক্ষস মারবে ভীম তোমার প্রসাদে।। আর এক কথা মাতা কহ দ্বিজবরে। এসব প্রচার যেন না করে অন্যেরে।। তবে কুন্তী তত্ত্ব কহিলেন সে ব্রাম্ভণে। বলিসজ্জা করি দ্বিজ দিল ততক্ষণে।। নিশাকালে বৃকোদর শকটে চড়িয়া। যথা বৈসে বনে বক উত্তরিল গিয়া।। রে রে বক নিশাচর আইস সত্বর। আত বলি অন্ন খায় বীর বৃকোদর।। নাম ধরি ডাকিতে ক্রোধেতে থর থর। বক বীর আসে যেন পর্ব্বত শিখর।। মহাকায় মহাবেশ মহাভয়ঙ্করে। চলিতে বিদরে ক্ষিতি চরণের ভরে।। অন্ন খায় বৃকোদর দেখে বিদ্যমান। ক্রোধে দুই চক্ষু যেন অনল-সমান।। ডাক দিয়া বলে বক আরে দুষ্টমতি। মনুষ্য হইয়া কেন করিস্ অনীতি।। সকুটুম্ব ব্রাম্ভণে খাইব তোমা দোষে। এত বলি নিশাচর রোকে অতি রোষে।। রাক্ষসের বাক্য ভীম না শুনিয়া কানে। পৃষ্ঠ দিয়া তারে, অন্ন পুরেন বদনে।। দেখি ক্রোধে নিশাচর করয়ে গর্জ্জন। উর্দ্ধবাহু করি ধায় অতি ক্রোধমন।। দুই হাতে বজ্রসম পৃষ্ঠেতে প্রহারে। তথাপি ভ্রুক্ষেপ নাহি করে বৃকোদরে।। পৃষ্ঠে যে রাক্ষস মারে সহেন হেলায়। পায়সান্ন খায় বীর বসে নিঃশঙ্কায়।। দেখিয়া অধিক ক্রোধ হৈল নিঃশঙ্কায়।। দেখিয়া অধিক ক্রোধ হৈল নিশাচরে। বৃক্ষ উপাড়িয়া মারে ভীমের উপরে।। তথাপিও অন্ন খায় হাসি বৃকোদর। বাম হাতে কাড়িয়া নিলেন বৃক্ষবর।। পুনঃ মহাবৃক্ষ উপাড়িয়া নিশাচর। গর্জ্জিয়া মারিল বৃক্ষ ভীমের উপর।। বৃক্ষে বৃক্ষে যুদ্ধ হৈল না যায় কথনে। উচ্ছন্ন হইল বৃক্ষ না রহিল বনে।। শিলাবৃষ্টি করে দোঁহে দোঁহার উপর। বাহুতে বাহুতে যুদ্ধ হৈল ভয়ঙ্কর।। মুণ্ডে মুণ্ডে বুকে বুকে ভুজে ভুকে তাড়ি। ধরাধরি করি দোঁহে যায় গড়াগড়ি।। যুদ্ধেতে হইল ক্ষান্ত বক নিশাচর। রক্ষসে ধরিল বীর কুন্তীর কুমার।। বাম হস্তে দুই জানু দক্ষিণ হস্তে শির। বুকে জানু দিয়া টানিলেন ভীম বীর।। মধ্যে মধ্যে ভাঙ্গিয়া করেন দুই খান। মহাশব্দ করি বীর ত্যাজিল পরাণ।। আর যত আছিল বকের অনুচর। ভয়ে পলাইয়া সবে গেল বনান্তর।। নগর নিকটে ভীম বকে ফেলাইয়া। মাতৃ-ভ্রাতৃ-স্থানে বীর কহিলেন গিয়া।।