এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
স্তোত্রম্--ওঁ নমঃ সরস্বতৈ নমঃ। বৃহষ্পতি রুবাচ।
বিশ্বামিত্র বলে অন্য আমি নাহি চাই। কিবা প্রাণ যায় কিবা ব্রাম্ভণত্ব পাই।। এতেক শুনিয়া ধাতা করিল গমন। পুনঃ তপ আরম্ভিল গাধির নন্দন।। উর্দ্ধ দুই পদ করি উর্দ্ধোমুখ হৈয়া। একপদে অঙ্গুলিতে রহে দণ্ডাইয়া।। শুষ্ককাষ্ঠমত সে হইল নরবর। কেবল জাগয়ে প্রাণ মজ্জার ভিতর।। তাঁর তপে মহাতাপ হৈল তিনলোকে। ইন্দ্রাদি দেবতা ভয় হইল সবাকে।। সহিতে নারিয়া ব্রম্ভা আসে আরবার। বলিলেন বর মাগ গাধির কুমার।। বিশ্বামিত্র বলে আমি মাগিয়াছি অগ্রে। ব্রাম্ভণ আমারে কর যদি থাকি ভাগ্যে।। এড়াইতে না পারিয়া সৃষ্টি-অধিকারী। বিশ্বামিত্র গলে দেন আপন উত্তরী।। বর দিয়া চতুর্ম্মুখ করিলা গমন। বিশ্বামিত্র মুনি হৈলা মহাতপোধন।। কেহ নহে তপস্যায় তাঁহার সমান। সদা মনে জাগে বশিষ্ঠের অপমান।। বশিষ্ঠের অপমান সদা জাগে মনে। বশিষ্ঠের ছিদ্র খুঁজি ভ্রমে অনুক্ষণে।। ইক্ষাকু বংশেতে রাজা সর্ব্বগুণধাম। সংসারে বিখ্যাত সেই কল্মাষপাদ নাম।। মহামুনি বশিষ্ঠ তাঁহার পুরোহিত। যজ্ঞ হেতু তাঁহারে করিল নিমন্ত্রিত।। বশিষ্ঠ বলে কিছু আছে প্রয়োজন। রাজা বলে যজ্ঞ আমি করিব এখন।। মুনি না আইল রাজা হৈল ক্রোধমন। বিশ্বামিত্রে যজ্ঞ হেতু কৈল নিমন্ত্রণ।। বিশ্বামিত্র লৈয়া সঙ্গে আসেন রাজন। পথেতে ভেটিল শক্তি বশিষ্ঠনন্দন।। রাজা বলে পথ ছাড়ি দেহ মুনিবর। শক্তি বলে মোরে পথ দেহ নরেশ্বর।। রাজা বলে রাজপথ জানে সর্ব্বজন। পথ ছাড়, যাব আমি যজ্ঞের সদন।। শক্তি বলে দ্বিজপথ বেদের বিহিত। পথ ছাড়ি দেহ মোরে যাইব ত্বরিত।। এইমত বলাবলি হইল দুইজন। কেহ না ছাড়িল পথ কুপিল রাজন।। হাতেতে প্রবোধ বাড়ি আছিল রাজার। ক্রোধে মুনি অঙ্গে রাজা করিল প্রহার।। প্রহারে জর্জ্জর শক্তি রক্ত পড়ে ধারে। ক্রোধ-চক্ষে চাহিয়া বলিল নরবরে।। উত্তম বংশেতে জন্ম করিস অনীতি। ব্রাম্ভণেরে হিংসা তুই করিস দুর্ম্মতি।। এই পাপে মম শাপে হও নিশাচর। মনুষ্যের মাংসেতে তোর পুরুক উদর।। শাপ শুনি ব্যাস্ত হৈল সৌদাস-নন্দন। কৃতাঞ্জলি করি বলে বিনয়-বচন।। হেনকালে বিশ্বামিত্র পেয়ে অবসর। রাজ-অঙ্গে নিয়োজিল এক নিশাচর।। সম্মুখে পাইয়া শক্তি ধরিল রাজন। ব্যাঘ্র যেন পশু ধরি করয়ে ভক্ষণ।। মোরে শাপ দিলা দুষ্ট ভুঞ্জ ফল তার। ধরিয়া ঘাড়ের রক্ত খাইব তোমার।। শক্তিকে খাইয়া মুর্ত্তি হৈল ভয়ঙ্কর। উন্মত্ত হইয়া গেল বনের ভিতর।। দেখি বিশ্বামিত্র মুনি ভাবিল অন্তরে। রাক্ষস লইয়া সঙ্গে গেল মুনিবরে।। যথা আছে বশিষ্ঠের শতেক কুমার। কাল পেয়ে বিশ্বামিত্র ফল দেয় তার।। একে একে দেখিয়া সর্ব্বজনে দিল। রাক্ষস সবারে ধরি ভক্ষণ করিল।। বশিষ্ঠ আসিয়া গৃহে দেখে শূণ্যময়। শত পুত্রে না দেখিয়া হইল বিস্ময়।। ধ্যানেতে জানিল যাহা বিশ্বামিত্র কৈল। শক্তি সহ শত পুত্রে রাক্ষসে ভক্ষিল।। শত পুত্র-শোকে তাঁর দহয়ে শরীর। মহাধৈর্য্যবন্ত তবু হইল অস্থির।। আপনার মরণ বাঞ্ছিয়া মুনিবর। শোকানলে প্রবেশিল সমুদ্র ভিতর।।