এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
সরস্বতীং নমস্যামি চেতনাং হৃদিসংস্থিতাং।
সমুদ্র দেখিয়া তারে রাখি গেল কূলে। মরণ নহিল যদি সমুদ্রের জলে।। অত্যুচ্চ পর্ব্বতে গিয়া উঠিল সে মুনি। তথা হৈতে শোকাকুল পড়িল ধরণী।। বিংশতি সহস্র ক্রোশ উচ্চ হৈতে পড়ি। তুলারাশি প'রে মুনি যায় গড়াগড়ি।। তাহাতে নহিল মৃত্যু চিন্তে মুনিরাজ। প্রবেশ করিল গিয়া অনলের মাঝ।। যোজন-প্রসর অগ্নি পরশে আকাশে। শীতল হইল অগ্নি মুনির পরশে।। তবে মুনি প্রবেশিল অরণ্য ভিতর। নানা পশু ব্যাঘ্র হস্তী ভল্লুক শূকর।। বশিষ্ঠে দেখিয়া সবে পলাইয়া যায়। হেনমতে কৈল মুনি অনেক উপায়।। মরণ নহিল মুনি ভ্রমিল সংসার। কতদিনে গৃহে মুনি আসে আপনার।। একশত পুত্র নাহি দেখি মুনিবর। পুত্ত্রশোকে অবশ হইল কলেবর।। চতুর্দ্দিকে অনুক্ষণ বেদ অধ্যয়ণ। নানাশাস্ত্র পঠন করিত পুত্ত্রগণ।। এসব চিন্তিয়া মুনি অধিক তাপিত। গৃহমধ্যে প্রবেশিতে নাহি চায় চিত।। পুনরাপি বশিষ্ঠ চলিল দেশান্তর। মৃত্যুর উপায় মুনি করে নিরন্তর।। দেখিল একটি নদী অত্যন্ত গভীর। ভয়ঙ্কর লক্ষ লক্ষ আছয়ে কুম্ভীর।। তাহে পড়িবার তরে ইচ্ছা কৈল মুনি। হেনকালে পাছু হৈতে শুনে বেদধ্বনি।। যোড়হাত করি বলে শক্তির বনিতা। তোমার সহিত প্রভু আইলাম হেথা।। মুনি বলে সঙ্গে আর আছে কোন জন। শত শত বেদধ্বনি করে উচ্চারণ।। শক্তির কণ্ঠের প্রায় শুনিলাম স্বর। এত শুনি বলে দেবী বিনয় উত্তর।। শক্তির নন্দন আছে আমার উদরে। দ্বাদশ বৎসর বেদ অধ্যয়ন করে।। এত শুনি বশিষ্ঠ হৈল হৃষ্টমন। বংশ আছে শুনি নিবর্ত্তিল তপোধন।। বধু সঙ্গে লইয়া চলিল পুনঃ ঘরে। হেনকালে ভেটিল রাক্ষস নরবরে।। নির্জ্জন গহন বনে থাকে নিরন্তর। বহু নর পশু খেয়ে পূর্ণিত উদর।। ভূপতি কল্মাষপাদ দেখি বশিষ্ঠেরে। মুখ মেলি ধাইল মুনিরে গিলিবারে।। বিপরীত মূর্ত্তি দেখি হাতে কাষ্ঠদণ্ড। তৃতীয় প্রহরে যেন তপন প্রচণ্ড।। নিকটে আইল মূর্ত্তি দেখি ভয়ঙ্কর। দেখি অদৃশ্যন্তী দেবী কাঁপে থর থর।। শ্বশুরে ডাকিয়া বলে শুন মহাশয়। মৃত্যু উপস্থিত হের রাক্ষস দুর্জ্জয়।। রাক্ষসের হাতে দেখি নিকট মরণ। তোমা বিনা ইথে রাখে নাহি অন্যজন।। বশিষ্ঠ বলেন বধূ না করিহ ভয়। নৃপতি কল্মাষপাদ রাক্ষস এ নয়।। এতেক বলিতে দুষ্ট আইল নিকটে। মুনি গিলিবারে যান দশন বিকটে।। মুনি হুঙ্কারে দুষ্ট রহে কতদূরে। কমণ্ডলু-জল মুনি ফেলিল উপরে।। রাজ অঙ্গ হৈতে হৈল রাক্ষস বাহির। রাহু হৈতে যেন হৈল বাহির মিহির।। পূর্ব্বজ্ঞান হৈল রাজা পাইল চেতন। কৃতাঞ্জলি করি করে বশিষ্ঠে স্তবন।। অধম পাপিষ্ঠ আমি পাপে নাহি অন্ত। দয়া কর মুনিরাজ তুমি দয়াবন্ত।। কায়মনে আজি হৈতে তোমার কিঙ্কর। তব আজ্ঞাবর্তী আমি যাবৎ কলেবর।। সূর্য্যবংশে জন্ম মম সৌদাস-নন্দন। হেন কর মোরে, নাহি নিন্দে কোন জন।। এত বলি নৃপবর আজ্ঞা যে পাইয়া। অযোধ্যানগরে পুনঃ রাজা হৈল গিয়া।। বধূ সহ বশিষ্ঠ আইল নিজ ঘর। কত দিনে জন্মিল সে মুনি পরাশর।।