এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
স্ত্রোত্রেণানেন যে ভক্ত্যা মাং স্তবস্তি সদা নরা।।
ধনু টঙ্কারিয়া বীর চাহে জলপানে। আকর্ণ পুরিয়া চক্র ছিদ্রপথে হানে।। গর্জ্জিয়া উঠিল বাণ উল্কার সমান সুদর্শণে ঠেকিয়া হইল খান খান।। দ্রোণ দ্রোণি দোঁহে যদি বিমুখ হইল। বিষম লজ্জায় ভয়ে কেহ না উঠিল।। তবে কর্ণ মহাবীর সূর্য্যের নন্দন। ধনুর নিকটে শীঘ্র করিল গমন।। বাম হস্তে ধরে ধনু দিয়া পদভর। খসাইয়া গুণ পুনঃ দিল বীরবর।। টঙ্কারিয়া ধনুক যুড়িল বীর বাণ। উর্দ্ধকরে অধোমুখে পূরিয়া সন্ধান।। ছাড়িলেন বাণ বায়ুভরে বেগে ছুটে। জ্বলিন্ত অনল যেন অন্তরীক্ষে উঠে।। সুদর্শন চক্রে ঠেকি চূর্ণ হৈয়া গেল। তিলবৎ হৈয়া বাণ ভূতলে পড়িল।। লজ্জা পেয়ে কর্ণ ধনু ভূতলে ফেলিয়া। অধোমুখ হৈয়া সভামধ্যে বসে গিয়া।। ভয়ে ধনু পানে কেহ নাহি চাহে আর। পুনঃ পুনঃ ডাকি বলে দ্রুপদ-কুমার।। দ্বিজ হোক হোক ক্ষত্র হোক শূদ্র আদি। চণ্ডাল প্রভৃতি লক্ষ্য বিন্ধিবেক যদি।। লভিবে দ্রৌপদী সেই দৃঢ় মম পণ। এত বলি ঘন ডাকে পাঞ্চাল-নন্দন।। কেহ আর নাহি চায় ধনুকের ভিতে। একবিংশ দিন তথা গেল হেনমতে।। দ্বিজসভা মধ্যেতে বসিয়া যুধিষ্ঠির। চতুর্দ্দিকে বেষ্টি বসিয়াছে চারি বীর।। আর যত বসিয়াছে ব্রাম্ভণমণ্ডল। দেবগণ মধ্যে যেন শোভে আখণ্ডল।। যে লক্ষ্য বিন্ধিবে কন্যা লবে সেই বীর। শুনি ধনঞ্জয় চিত্তে হ'লেন অস্থির।। বিন্ধিব বলিয়া লক্ষ্য করি হেন মনে। যুধিষ্ঠির পানেতে চাহেন অনুক্ষণে।। অর্জ্জুনের চিত্ত বুঝি কহেন ইঙ্গিতে। আজ্ঞা পেয়ে ধনঞ্জয় উঠেন ত্বরিতে।। অর্জ্জুন চলিয়া যান ধনুকের ভিতে। দেখিয়া ত দ্বিজগণ লাগে জিজ্ঞাসিতে।। কোথাকার দ্বিজ তুমি কিসের কারণ। সভা হৈতে উঠি যাহ কোন প্রয়োজন।। অর্জ্জুন বলেন যাই লক্ষ্য বিন্ধিবারে। প্রসন্ন হইয়া সবে আজ্ঞা দেহ মোরে।। শুনিয়া হাসিল যত ব্রাম্ভণমণ্ডল। কন্যারে দেখিয়া দ্বিজ হইল পাগল।। যে ধনুকে পরাজয় পায় রাজগণ। জরাসন্ধ শাল্ব দ্রোণ কর্ণ দুর্য্যোধন।। সে লক্ষ্য বিন্ধিতে দ্বিজ চাহ কোন লাজে। ব্রাম্ভণেতে হাসাইল ক্ষত্রিয় সমাজে।। বলিবেক ক্ষত্র যত, লোভী দ্বিজগণ। হেন বিপরীত আশা করে সে কারণ।। বহুদূর হৈতে আসিয়াছে দ্বিজগণ। বহু আশা করিয়াছে পাবে বহু ধন।। সে সব হইবে নষ্ট তোমার কর্ম্মেতে। অসম্ভব আশা কেন কর দ্বিজ ইথে।। অনর্থ না কর, বৈস আসিয়া ব্রাম্ভণ। এত বলি ধরি বসাইল দ্বিজগণ।। পুনঃ পুনঃ ডাকি বলে দ্রুপদ তনয়। শুনিয়া অধৈয্য চিত্ত বীর ধনঞ্জয়।। পুনঃ উঠিবারে পার্থ করিলেন গতি। হেনকালে শঙ্খনাদ করেন শ্রীপতি।। পাঞ্চজন্য শঙ্খনাদ ত্রিলোক পূরিল। দুষ্ট রাজগণ শব্দ শুনি স্তব্ধ হৈল।। শঙ্খশব্দ শুনি পার্থ হয়েন উল্লাস। ভয়াতুর জনে যেন পাইল আশ্বাস।। উঠ উঠ ধনঞ্জয় ডাকে শঙ্খবর। লক্ষ্য বিন্ধি দ্রৌপদীরে লভহ সত্বর।। গোবিন্দের ইঙ্গিতে উঠিলেন অর্জ্জুন। পুনঃ গিয়া ধরে তারে যত দ্বিজগণ।। দ্বিজগণ বলে দ্বিজ হইলে বাতুল। তব কর্ম্ম দেখি মজিবেক দ্বিজকুল।। দেখিলে হাসিবে যত দুষ্ট ক্ষত্রগণ। বলিবেক লোভী এই সব দ্বিজগণ।।