পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/১৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পীড়িতাঃ কামবাণেন চিরমাশ্লেষণোৎসুকা।।

 নবমেঘ ঘটা যেন শোভে ভূমিতলে।
 পার্থের নির্ঘাতে সব গাড়গড়ি বুলে।।
 লক্ষ লক্ষ তুরঙ্গ সারথি রথ রথী।
 অর্ব্বুদ অর্ব্বুদ কত পড়িল পদাতি।।
 অনন্ত ফনীন্দ্র যেন মথে সিন্ধুজল।
 দুই ভাই রাজগণে মথিল সকল।।
 রক্তেতে বহিল নদী রক্তেতে সাঁতারে।
 রক্তমাংসাহারী ধায় ঘোর রব ক'রে।।
 বিস্ময় মানিয়া চিত্তে যত রাজগণ।
 দুইভাই আনন্ন্দে করেন আলিঙ্গন।।
 চতুর্দ্দিক হইতে আইল দ্বিজগণ।
 জয় জয় দিয়া কহে আশীষ বচন।।
 মহাভারতের কথা অমৃতের ধার।
 ইহলোকে পরলোকে হয় উপকার।।
 কাশীরাম দাস কহে পাঁচালীর ছন্দে।
 সজ্জন রসিক সাধু হেতু মকরন্দে।।
     ------
 ভীমের যুদ্ধে রাজপরিবারদিগের ত্রাস।
   ভীমের ভৈরব নাদ ভয়ঙ্কর মূর্ত্তী।
 হাতে বৃক্ষ যেন যুগান্তক-সমবর্ত্তী।।
 ভঙ্গ দিয়া রাজগণ ধায় চতুর্ভিত। 
 মহারোল নগরে হইল অপ্রমিত।।
 হেনকালে আইল পুরের একজন।
 দ্রৌপদীর অগ্রে কহে করিয়া ক্রন্দন।।
 প্রাণ লৈয়া দেশান্তরে গেল প্রজাগণ।
 অন্তঃপুরে কি হইল না জানি এক্ষণ।।
 ধন প্রাণ রাজ্য দেশ সবার সহিত।
 তোমার কারণা রাজা মজিল নিশ্চিত।।
 শুনিয়া কাতর হৈল দ্রুপদনন্দিনী।
 জনকের ঠাঁই শীঘ্র পাঠায় কোশিনী।।
 যাহ শীঘ্র কোশিনী জনকে গিয়া কহ।
 ত্যাজ যুদ্ধ আপনার কুটুম্ব রাখহ।।
 আপনার প্রাণ রাখ, রাখ পুত্রগণ।
 দারা বধু রাখ গিয়া রাখহ স্ত্রীগণ।।
 আপনা রাখিলে তাত সকলি পাইবা।
 আমার লাগিয়া কেন সবংশে মজিয়া।।
 যে পণ করিয়াছিলা হইল পূর্ণিত।
 ব্রাম্ভণ বিন্ধিল লক্ষ্য সবার বিদিত।।
 মম ভাল মন্দ এবে তোমার না লাগে।
 ব্রাম্ভণের হইলাম আছি তাঁর আগে।।
 যাহ শীঘ্র না রহিও আমার শপথ।
 শুনিয়া দ্রৌপদী-বার্ত্তা ব্যাথিত দ্রুপদ।।
 পুত্রগণে আনি কহে সকরুণ বাণী।
 যতেক কহিয়া পাঠাইল যাজ্ঞসেনী।।
 চলি যাহ পুত্রগণ সম্বরহ রণ।
 এ সৈন্য সাগর কে করিবে নিবারণ।।
 সমান সহিতে যে সংগ্রাম সুশোভন।
 না শোভে পতঙ্গপ্রায় অগ্নিএ মরণ।।
 বিশেষ না জানি অন্তঃপুর-ভদ্রাভদ্র।
 সৈন্যগণ কোলাহল প্রলয়-সমুদ্র।।
 আপনার প্রাণ রাখ, রাখ পুরজন।
 আমি রহিলা দ্বিজ-সাহায্য কারণ।।
 যুদ্ধ করি প্রাণ আমি ত্যাজি আপনার।
 কৃষ্ণার যে গতি আজি সে গতি আমার।।
 ধৃষ্টদ্যুম্ন বলে তোমা মুখে নাহি লাজ।
 ভগিনীকে ছাড়িয়া যাব সংগ্রামের মাঝ।।
 হেন প্রাণ রাখি আর কোন প্রয়োজন।
 কোন্ লাজে লোকে দেখাইব এ বদন।।
 মারি কি মরিব আজি করিব সমর।
 তুমি যাও রাখ গিয়া আপনার ঘর।।
 পুত্রে বচন শুনি বলয়ে দ্রুপদ।
 কৃষ্ণা পাঠাইল বলি আপন সম্পদ।।
 যত দিন কৃষ্ণা হইয়াছে মম গৃহে।
 কভু না লঙ্ঘিনু আমি কৃষ্ণা যাহা কহে।।
 বৃহস্পতাধিক-বুদ্ধি কৃষ্ণা শশিমুখী।
 যাহার মন্ত্রণাবলে রাজ্যে আমি সুখী।।
 ধৃষ্টদ্যুম্ন বলিল তোমরা যাহ ঘর।
 কৃষ্ণার রক্ষণে আমি আছি একেশ্বর।।
 এত বলি প্রবোধি পাঠায় সবাকারে।
 পুনঃ ধৃষ্টদ্যুম্ন গিয়া প্রবেশে সমরে।।