পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/১৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুক্তাহার লসৎপীন-তুঙ্গস্তন ভরানতাঃ।

 করিল অনেক যুদ্ধ কীচক সংহতি।
 গদাঘাতে ধৃষ্টদ্যুম্ন করিল বিরথি।।
 গদার প্রহারে চূর্ণ হৈল হাড় তার।
 হাত হৈতে খসিয়া পড়িল ধনুঃশর।।
 নিরস্ত্র বিরথ হৈল দ্রুপদ-নন্দন।
 দ্বিজগণ মধ্যে পশি রাখিল জীবন।।
 কান্দয়ে দ্রৌপদী তবে করিয়া বিলাপ।
 না জানি যে কিবা হৈল বৃদ্ধ মম বাপ।।
 না জানি যে কিবা হৈল ভ্রাতৃ-মাতৃগণ।
 না জানি যে কিবা হৈল রাজ্যে প্রজাগণ।।
 কৃষ্ণার বচন শুনি কন ধনঞ্জয়।
 কি হেতু কান্দহ দেবী কারে তব ভয়।।
 কৃষ্ণা বলে আপনাকে নাহি করি তাপ।
 মম হেতু সবংশে মজিল মম বাপ।।
 পার্থ বলে কি হইবে করিলে বিষাদ।
 অভয় পঙ্কজ হয় গোবিন্দের পাদ।।
 এ মহাবিপদসিন্ধু তরিতে তরণী।
 গোবিন্দেরে স্মরণ করহ যাজ্ঞসেনী।।
 অর্জ্জুনের বাক্যে কৃষ্ণা স্মরে জগন্নাথ।
 হে কৃষ্ণ আপদহর্ত্তা জাগতের তাত।।
 তোমা বিনা রাখে মোরে নাহি হেন জন।
 আমারে বিপদে রক্ষা কর নারায়ণ।।
 তাত মাতঃ রাখ মম রাখ ভ্রাতৃগণ।
 রাজ্য দেশ রক্ষ মোর যত প্রজাগণ।।
 তুমি যদি সত্য পাল আমি যদি সতী।
 সবা জিনি মোরে লন দ্বিজ মম পতি।।
 দ্রৌপদীর আপদ জানিয়া জগন্নাথ।
 নাহি ভয় বলিয়া তুলেন বাম হাত।।
 দ্রৌপদীরে আশ্বাসি বাজান পাঞ্চজন্য।
 শব্দেতে নিস্তব্ধ হৈল যত রিপুসৈন্য।।
 সর্ব্ব যদুগণে ডাকি বলেন গোবিন্দ।
 এই দেখ অর্জ্জুনে বেড়িল রাজবৃন্দ।।
 সৈন্যগণ যাতায়াতে ভাঙ্গিল নগর।
 যত্ন পূর্ব্ব রাখ সব পাঞ্চালের ঘর।।
 শুনিয়া সাত্যকি গদা প্রদ্যুম্ন সারণ।
 গোবিন্দে চাহিয়া বলে করিয়া গর্জ্জন।।
 এই যদি ধনঞ্জয় কুন্তীর কুমার।
 তুমি তার প্রিয়বন্ধু বলয়ে সংসার।।
 এ মহাসংকট মধ্যে পড়িয়াছে একা।
 আর কোন্ বেলা তার তুমি হবে সখা।।
 তুমি ক্ষমা কৈলে না ক্ষমিব আমা সব।
 মারিয়া ক্ষত্রিয়গণে রাখিব পাণ্ডব।।
 এত বলি চলে সবে যুদ্ধ করিবারে।
 প্রবোধিয়া বাসুদেব রাখেন সবারে।।
 এতক্ষণ আমি মারিতাম রাজগণ।
 যুদ্ধ করিবারে রাম করেন বারণ।।
 রামের বচন কেবা লঙ্ঘিবারে ক্ষম।
 বিশেষ বুঝিব অর্জ্জুনের পরাক্রম।।
 অসুখী না হও কিছু অর্জ্জুন কারণ।
 পাঞ্চাল নগর গিয়া করহ রক্ষণ।।
 কুন্তীর সহিত কুম্ভকার-কর্ম্মশাল।
 তথা রক্ষা হেতু যান শ্রীরাম-গোপাল।।
 মহাভারতের কথা সুধাসিন্ধুবত।
 কাশীরাম কহে সাধু পিয়ে অবিরত।।
       ------
   অর্জ্জুনের সহিত দ্রৌপদীর স্বস্থানে গমন,
   মুনিবর বলে শুন রাজা জন্মেজয়।
 জিনিয়া সকল সৈন্য ভীম ধনঞ্জয়।।
 সমস্ত দিবস গেল হৈল অন্ধকার।
 ধীরে ধীরে গেলেন ভার্গব-কর্ম্মশাল।।
 দোঁহার পশ্চাতে চলে দ্রুপদনন্দিনী।
 মত্তহস্তী পাছে যেন চলিল হস্তিনী।।
 চতুর্দ্দিকে বেষ্টিত যতেক দ্বিজগণ।
 কেমনে বাহির হৈব চিন্তে দুইজন।।
 কৃতাঞ্জলি হইয়া বলেন দ্বিজগণে।
 বিদায় হই যে আজি সবাকার স্থানে।।
 অর্জ্জুনের বাক্য শুনি বলে দ্বিজগণে।
 এমত অপ্রিয় দ্বিজ বল কি কারণ।।
 তোমা দোঁহা সঙ্গ না ছাড়িব কাদাচন।
 না জানি কি করিবেক যত ক্ষত্রগণ।।
 নিশাকালে তোমা দোঁহে নিঃসখা দেখিয়া।
 দোঁহা মারি দ্রৌপদীরে লইবে কাড়িয়া।।