পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/১৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মার্কণ্ডেয়ের ধ্যান--দ্বিভুজং জটিলং সৌমং সুবৃদ্ধং চিরজীবিনং।

 পাণ্ডুপুত্র জীয়ে আছে শুনিয়া শ্রবণে।
 সবাই বাসনা সদা করে মনে মনে।।
 সহজে এ শিশুগণ কি জানে বিচার।
 মম বাক্য শুন রাজা হিত যে তোমার।।
 জতুগৃহে পোড়াইলা লজ্জিত অন্তরে।
 সব দোষ গেল পুরোচনের উপরে।।
 প্রিয়বাক্যে এস্থানে আনহ পাণ্ডুসুতে।
 ঘুচিবেক লজ্জা যশ ঘুষিবে জগতে।।
 বিদুরের বচনেতে ধৃতরাষ্ট্র বলে।
 যে বলিলা বিদুর আমার মনে নিলে।।
 পাণ্ডবে প্রবোধে হেন নাহি অন্যজন।
 আপনি বিদুর তুমি করহ গমন।।
 এতেক বলিলা যদি অন্ধ নরপতি।
 শুনিয়া সে সভাজন হৈল হৃষ্টমতি।।
      ------
 বিদুরের পাণ্ডব আনয়নে পাঞ্চালে গমন।
   তিলমাত্র বিদুর বিলম্ব না করিল।
 বহু ধনরত্ন লৈয়া পাঞ্চালে চলিল।।
 একে একে সবাকারে সম্ভাষে বিদুর।
 কুন্তীসহ বসিয়াছে যত অন্তঃপুর।।
 দ্রৌপদীরে তুষিল অনেক অলঙ্কারে।
 নানা রত্নে বিভূষিল পঞ্চ সহোদরে।।
 বিদুরে দেখিয়া বড় হরিষ দ্রুপদ।
 সূর্য্যের উদয়ে যেন ফুটে কোকনদ।।
 পঞ্চভাই দেখিয়া বিদুর মহাশয়।
 আনন্দে নয়ন-জলে ভাসিল হৃদয়।।
 বিদুর-চরণে প্রণমিল পঞ্চজন।
 কুশল জিজ্ঞাসা কৈল যত বন্ধুগণ।।
 বিদুর কহিল যত কুশল-সংবাদ।
 একে একে কহিল সবার আশীর্ব্বাদ।।
 বিদুরে লইয়া গেল দ্রুপদ রাজন্।
 মিষ্টান্নে পাকান্নে তাঁরে করায়ে ভোজন।।
 ভোজনান্তে সর্ব্বলোক বসিল সভাতে।
 দ্রুপদে বিদুর তবে লাগিল কহিতে।।
 পাণ্ডবে বরিল রাজা তোমার নন্দিনী।
 বড় আনন্দিত হৈল ধৃতরাষ্ট্র শুনি।।
 তোমা হেন বন্ধু রাজা বড় ভাগ্যে পায়।
 সে কাওণে সম্ভাষিতে পাঠায় আমায়।।
 বহু কহিলেন ভীষ্ম গঙ্গার নন্দন।
 তোমা হেন সন্মন্ধেতে প্রীত হৈল মন।।
 প্রিয়সখা তোমারে করিয়া আলিঙ্গন।
 পুনঃ পুনঃ বলিলেন নিজে গুরু দ্রোণ।।
 চিরদিন দেখি নাহি পাণ্ডুপুত্রগণ।
 সবাই উদ্বিগ্ন বড় এই সে কারণ।।
 গান্ধারী প্রভৃতি যত কুরুকুলনারী।
 দেখিবারে উতরোল তোমার কুমারী।।
 পাণ্ডবেরা বহুদিন পেয়েছ হুতাশ।
 চিরদিন নাহি বন্ধুগণের সম্ভাষ।।
 আমারে ত এইমত কহে নরপতি।
 যাইতে পাণ্ডবগণে আপন বসতি।।
 দ্রুপদ বলিল ভাগ্য আমার আছিল।
 কুরু মহাবংশ সহ কুটুম্বিতা হৈল।।
 যে বল বিদুর সেই মম মনোনীত।
 পাণ্ডবেরা নিজ গৃহে যাইতে উচিত।।
 জ্যেষ্ঠতাত ধৃতরাষ্ট্র জনক সমান।
 তাঁর সেবা পাণ্ডবের হয়ত বিধান।।
 ভয় আছে তথা যদি হেন কর মনে।
 তোম সবা বিরোধিবে কাহার পরণে।।
 তথাপিও নহে আর হস্তিনায় স্থিতি।
 খাণ্ডবপ্রস্থেতে গিয়া করহ বসতি।।
 দ্রুপদের বচন শুনিয়া পঞ্চজন।
 মাতৃসহ বিদায় হৈলেন ততক্ষণ।।
 রথে চড়ি গেলেন দ্রৌপদী সমুদিত।
 হস্তিনানগরে যান বিদুর সহিত।।
 পাণ্ডব হস্তিনা আসে শুনি প্রজাগণ।
 বাল বৃদ্ধ যুবা ধায় দর্শন কারণ।।
 লজ্জা ভয় ত্যাজি ধায় কুলের যুবতী।
 উর্দ্ধশ্বাসে চলি যায় নারী গর্ভবতী।।
 পাণ্ডবেরে দেখিতে করয়ে হুড়াহুড়ি।
 যষ্ঠিভর করিয়া চলিল যত বুড়ি।।
 পাঁচ ভাই গেলেন যথা জ্যেষ্ঠতাত।
 একে একে তাঁহারে করয়ে প্রণিপাত।।