পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/১৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রার্থনা মন্ত্রঃ--চিরজীবী যথা ত্বং ভো ভবিষ্যামি তথা মুনে।

 গিয়া হিমালয়েতে তপস্যা আরম্ভিল।
 অনেক বৎসর বায়ু আহারে রহিল।।
 অনাহারে বহু তপ কৈল দুইজনা।
 যতেক কঠোর কৈল না হয় গণনা।।
 দোঁহার কঠোর তপ দেখি পিতামহ।
 ডাকিয়া বলেন মনোমত বর লহ।।
 দুই ভাই বলে মোরে করহ অমর।
 ব্রম্ভা বলিলেন তুমি মাগ অন্যবর।।
 দুই ভাই বলে মোরা অন্য নাহি চাই।
 তবে তপ ত্যাজি যদি এই বর পাই।।
 বিধাতা বলেন জন্ম হইলে মরণ।
 মরণ-বিধান কিছু কর দুইজন।।
 দ্বৈতদ্বয় বলিলেক বর দেহ তবে।
 দুই ভায়ে ভেদ হৈলে মরণ হইবে।।
 তথাস্তু বলিয়া ব্রম্ভা হৈলা অন্তর্দ্ধান।
 সুন্দ উপসুন্দ গেল আপনার স্থান।।
 ত্রৈলোক্য জিনিতে সৈন্য সাজিল অসুর।
 নানাবর্ণে অস্ত্র লৈয়া গেল সুরপুর।।
 অমর জানিল ব্রম্ভা দিয়াছেন বর।
 ছাড়িয়া অমরাবতী হইল অন্তর।।
 বিনাযুদ্ধে পলাইয়া গেল দেবগণ।
 ইন্দ্রপুরে ইন্দ্রত্ব করিল দুইজন।।
 যক্ষ রক্ষ গন্ধর্ব্ব জিনিল নাগালয়।
 সবে পলাইয়া গেল দুই দৈত্যভয়।।
 যজ্ঞ হোম ব্রত করে দ্বিজ মুনিগণ।
 একে একে উচ্ছন্ন করিল দুইজন।।
 দেবকন্যা নাগকন্যা অপ্সরী কিন্নরী।
 ত্রৈলোক্যে পাইল যত অপুর্ব্ব সুন্দরী।।
 সে সবারে হরিয়া আনিল নিজ ঘরে।
 যখন যাহারে ইচ্ছা তখনি বিহরে।। 
 দেবের যে বাহন ভূষা অলঙ্কার।
 সর্ব্ব রত্নে পূর্ণ কৈল আপন ভাণ্ডার।।
 স্থানভ্রষ্ট হৈয়া যত দেব ঋষিগণ।
 ব্রম্ভারে সকলে গিয়া কৈল নিবেদন।।
 ব্রম্ভা কন রচ এক নারী মনোরম।
 তুলনা না হয় যেন এ তিন ভুবন।।
 সেইক্ষণে বিশ্বকর্ম্মা মহা বিচক্ষণ।
 বিধাতার আজ্ঞা পেয়ে করিল সৃজন।।
 ত্রৈলোক্য ভিতরে যত রূপবন্ত ছিল।
 সর্ব্বরূপ হৈতে রূপ তিল তিল নিল।।
 অপূর্ব্ব সুন্দরী নারী করিয়া রচন।
 ব্রম্ভার অগ্রেতে লৈয়া দিল ততক্ষণ।।
 যে সব দেবতা সেই কন্যা পানে চাহে।
 যেই অঙ্গে পড়ে দৃষ্টি সেই অঙ্গে রহে।।
 ব্রম্ভা বলে নাহি হয় এ রূপের সীমা।
 তিল তিল আনি কৈল নাম তিলোত্তমা।।
 তবে করযোড়ে কন্যা ধাতা অগ্রে কয়।
 কি করিব আজ্ঞা মোরে কর মহাশয়।।
 বিধাতা বলেন সুন্দ উপসুন্দ শূর।
 তপোবলে দুই দৈত্য লৈল তিন পুর।।
 ভেদ হৈলে দুই ভাই হইবে সংহার।
 উপায় করিয়া ভেদ করাও দোঁহার।।
 পাইয়া ব্রম্ভার আজ্ঞা চলিল সুন্দরী।
 দেবের মণ্ডলী কন্যা প্রদক্ষিণ করি।।
 কন্যা দেখি মোহিত হৈল ত্রিলোচন।
 চারিভিতে চারি গোটা হইল বদন।।
 যেই দিকে চায় মুখ সেই দিকে রয়।
 পূর্ব্ব সহ পঞ্চমুখ হৈল মৃত্যুঞ্জয়।।
 মদন পীড়িত হৈয়া চাহে পুরন্দর।
 দশ শত চক্ষু তাঁর হৈল কলেবর।।
 আর যত দেবগণ একদৃষ্টে চায়।
 অধৈর্য্য হইল সবে দেখিয়া কন্যায়।।
 তবে তিলোত্তমা গেল যথা দুই জন।
 ক্রীড়া করে দুই ভাই লইয়া স্ত্রীগণ।।
 কোটি কোটি দৈত্যগণ সহ পরিবার।
 অশ্ব গজ রথ সৈন্য পূর্ণিত ভাণ্ডার।।
 লক্ষ লক্ষ বিদ্যাধরী ল'য়ে দুইজনে।
 বিন্ধগিরি মধ্যে ক্রীড়া করে হৃষ্টমনে।
 রক্তবস্ত্র পরি তিলোত্তমা বিদ্যাধরী।
 নানা পুষ্প তুলে সেই পর্ব্বত উপরি।।
 ধীরে ধীরে তথা দৈত্য করিল গমন।
 দুরে থাকি কন্যারে দেখিল দুইজন।।