এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
বরদাভয়হস্তাঞ্চ শরচ্চন্দ্র-নিভাননাং।
সে পুষ্পে ভূষিত হ'য়ে ভীষ্মক-দুহিতা। ত্রৈলোক্যের নারী জিনি হইল শোভিতা।। সবা হৈতে প্রেয়সী তোমারে আমি জানি। এবে জানিয়াম কৃষ্ণে প্রেয়সী রুক্মিনী।। মুনির এতেক বাক্য শুনিয়া সুন্দরী চিত্রের পুতলী প্রায় রহে ধ্যান করি।। ছিঁড়িয়া ফেলিলা কণ্ঠে ছিল যেই হার। ঘুচাইয়া ফেলেন অঙ্গের অলঙ্কার।। ছিঁড়িল পুষ্পের মালা খুলিল কুন্তল। হাহাকার করিয়া পড়েন ভূমিতল।। সতীর দেখিয়া কষ্ট মনে মনে হাসি। রৈবতক পর্ব্বতেতে বেগে যান ঋষি।। রুক্মিনীর গৃহে কৃষ্ণ করেন ভোজন। হেনকালে উপনীত তথা তপোধন।। গোবিন্দ কহেন মুনি কহ সমাচার। পুনঃ হেথা আগমন কি হেতু তোমার।। মুনি বলে শুন প্রভু শ্রীমধুসূদন। দ্বারকানগরে গিয়াছিলাম এখন।। সত্যভামা জিজ্ঞাসিল তোমার বারতা। প্রসঙ্গে প্রসঙ্গে হৈল পারিজাত কথা।। এমন করিবে বলি জানিব কেমনে। রুক্মিনীরে দিলা পুষ্প শুনিয়া শ্রবণে।। সেইক্ষণে মুর্চ্ছাপন্ন পড়িল ধরনী। হাহাকার করিয়া কান্দয়ে উচ্চধ্বনি।। ছিঁড়িয়া ফেলিল যত বসন ভূষণ। কপালে প্রহার করে হস্ত ঘনে ঘন।। সবে সখিগণ মেলি করয়ে প্রবোধ। নাহি শুনে কানে দ্বিগুণ যে বাড়ে ক্রোধ।। প্রাণ যাক প্রাণ যাক এইমাত্র ডাকে। দেখিয়া কহিতে আইলাম যে তোমাকে।। শুনিয়া গোবিন্দ চিত্তে হইল বিস্ময়। কি হবে কি হবে বলি চিন্তেন হৃদয়।। পারিজাত পুষ্প হেতু অনর্থ ভাবিয়া। রুক্মিনীরে শ্রীকৃষ্ণ কহেন প্রবোধিয়া।। কি করিব বৈদর্ভী আপনি কর ক্ষমা। তুমি জান যেমন চরিত্র সত্যভামা।। ক্রোধেতে আপন প্রাণ ছাড়িবারে পারে। তোমার প্রসাদ হৈল দেহ পুষ্প তারে।। শুনিয়া রুক্মিনী হইলেন বড় দুঃখী। গোবিন্দেরে কহেন হইয়া অধোমুখী।। দিয়া পুষ্পরাজ পুনঃ লইবা মুরারী। সহজে দুর্ভাগা আমি কি করিতে পারি।। মোরে পুষ্প দিলা বলি পুড়িছে অন্তরে। মরুক পুড়িয়া, পুষ্প কেন দিব তারে।। রুক্মিনীর বাক্য শুনি চিন্তেন শ্রীহরি। নারদেরে জিজ্ঞাসেন বৃত্তান্ত বিবরি।। কোথায় পাইলা পুষ্প কহ মুনিবর। নারদ কহেন আছেন স্বর্গে তরুবর।। ইন্দ্রের রক্ষকগণ করয়া রক্ষণ। তাহাতে নন্দন বন করয়ে শোভন।। মাগিয়া পাঠাও পুষ্প সহস্রলোচনে। তব নাম শুনিলে দিবেক সেইক্ষণে।। গোবিন্দ বলেন মুনি যাও তুমি তথা। মোর নাম লৈয়া ইন্দ্রে কহ এই কথা।। ক্ষীরোদ-মথনে পুষ্প হৈয়াছে উৎপত্তি। একা কেন ভোগ তুমি কর শচীপতি।। দেহ পারিজাত যে আমার ভাগ আছে। না দিলে সহজে পুষ্প কষ্ট পাবে পাছে।। স্ম্প্রীতে প্রথমে মাগিবেন তপোধন। না দিলে এ সব পরে কহিবা তখন।। এত বলি নারদে পাঠান নারায়ণ। দ্বারাবতী যান সত্যভামার কারণ।। মহাভারতের কথা অমৃত লহরী। কাশী দাস কহে সাধু পিয়ে কর্ণ ভরি।। ------ সত্যভামার মান ভঞ্জন। পড়ি আছে সত্যভামা ভূমির উপর। মুক্তকেশী গড়াগড়ি ধূলায় ধূসর।। বসন ভূষণ ভিজে নয়নের জলে। শশিকলা যেমন পতিতা ভূমিতলে।। চতুর্দ্দিকে ব্যজনী ধরিয়া সখিগণ। সুগন্ধী সলিল সিঞ্চে চাপয়ে চরণ।।