এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
পট্টবস্ত্র-পরীধানাং পীনোন্নত পয়োধরাং।
সঘনে নিশ্বাস বহে হস্ত দিয়া নাকে। দেখিয়া কৃষ্ণের অশ্রু নয়নে না থাকে।। আপনি ব্যজন লৈয়া সখী-হস্ত হৈতে। মন্দ মন্দ বায়ু কৃষ্ণ লাগিল করিতে।। গোবিন্দের আগমনে উজ্জ্বল হৈল ধাম। ষড়ঋতু লৈয়া যেন উপনীত কাম।। আমোদিত হৈল গৃহ অঙ্গের সৌরভে। সহস্র সহস্র অলি ধায় ভোঁ ভোঁ রবে।। অচেতন ছিল সখী পাইল চেতন। সৌরভে জানিল গৃহে কৃষ্ণ-আগমন।। উচ্চৈঃস্বরে কান্দে ক্রোধে চক্ষু নাহি মেলে। ক্ষণেক থাকিয়া সব সখিগণ বলে।। কে দহে আমার অঙ্গ হুতাশনপ্রায়। রুক্মিনীবান্ধব কিবা আইল হেথায়।। এতবলি মারে শিরে কঙ্কণের ঘাত। দুই হস্তে হস্ত ধরিলেন জগন্নাথ।। কেন হেন বল রুক্মিনীর পতি বলি। সত্যভামা-প্রাণ আমি চাহ চক্ষু মেলি।। আমার কি অপরাধ না পাই ভাবিয়া। কি হেতু এতেক কষ্ট দাও প্রাণপ্রিয়া।। এত বলি কৃষ্ণ বসাইলেন ধরিয়া। মুখ মুছাইলেন আপন বস্ত্র দিয়া।। গোবিন্দের এতেক বিনয় বাক্য শুনি। কান্দিতে কান্দিতে কহে আধ আধ বাণী।। মুখেতে তোমার সুধা অন্তরে নিষ্ঠুর। এবে জানিলাম তুমি কত বড় ক্রূর।। পারিজাত পুষ্পরাজ অতুল সুবাস। রুক্মিনীরে দিলা, আমা করিয়া নিরাশ।। কার শক্তি সহিবে এতেক অপমান। এক্ষণে ত্যাজিব প্রাণ তোমা বিদ্যমান।। গোবিন্দ কহেন প্রিয় ত্যজহ বিলাপ। কোন্ দ্রব্য পারিজাত, চিন্তা এত তাপ।। এক পুষ্প হেতু তোমা ক্রোধ হইয়াছে। তোমারে আনিয়া দিব পুষ্পসহ গাছে।। শুনি সত্যভামা দেবী উল্লসিত-মন। হাসিয়া কহেন কৃষ্ণে মেলিয়া নয়ন।। আসনে বাসাইলেন উঠি যদুনাথে। চরণ প্রক্ষালিলেন সুগন্ধি জলেতে।। ভোজন করিলা কৃষ্ণে পরম হরিষে। তাম্বুল যোগান দেবী বসি বাম পাশে।। আনন্দেতে রজনী বঞ্চেন দুইজন।। প্রভাতে উঠিয়া কৃষ্ণ করে স্নানদান। হেনকালে উপনীত মুনি ঢেঁকিযান।। কলহবিদ্যায় বিজ্ঞ দ্বন্দ্বপ্রিয় ঋষি। কহেন কৃষ্ণের অগ্রে গদগদ ভাষি।। কি আর কহিব কথা কহিবারে লাজ। কটুবাক্য আমারে কহিলা দেবরাজ।। শুন শুন দেবগণ কথন অদ্ভুত। নারদ আইল হৈয়া গোপালের দূত।। দেবের দুর্ল্লভ পারিজাত পুষ্পরাজ। মনুষ্যের হেতু মাগে মুখে নাহি লাজ।। এত অহঙ্কার কেন গোপালের হৈল। পূর্ব্বের বৃত্তান্ত বুঝি সব পাসরিল।। কংসভয়ে নন্দগৃহে ছিল লুকাইয়া। গোধন রাখিত নিত্য গোপান্ন খাইয়া।। একদিন চুরি করে খেয়েছিল ননী। হাতে বান্ধি মারিলেক নন্দের ঘরণী।। বৃষ অশ্ব সর্প বল করিল সংহার। সেই হেতু দেখি তার এত অহঙ্কার।। জরাসন্ধভয়ে স্থল নাহিক সংসারে। লুকাইয়া রহে গিয় সমুদ্রের ভিতরে।। হেনজনে পারিজাত পুষ্পে হৈল সাধ। নাহি দিলে বলিয়াছে করিবে প্রমাদ।। হেন কটুত্তর কি আমার প্রাণে সহে। কি করিব দূত আর অন্য জন নহে।। যাহ যাহ নারদ না থাক মোর কাছে। কহ গিয়া করুক সে যত শক্তি আছে।। নারদের মুখে শুনি এতেক বচন। ক্রোধেতে ঘুর্ণিত হৈল যুগল নয়ন।। গোবিন্দ বলেন ইন্দ্র হইয়াছে মত্ত। আপনি করিল লঘু আপন মহত্ব।।