পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/২০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রণাম মন্ত্র--জয় দেবি জগন্মাতর্জগদানন্দকারিণি।

 অদিতির কুণ্ডল দিলেন অদিতিরে।
 তথা হৈতে চলিলেন অমর নগরে।।
 নন্দন-কানন মধ্যে হৈল উপনীত।
 দেখেন কুসুমরাজ গন্ধে আমোদিত।।
 সাত্যকিরে বলেন আনহ তরুবর।
 শুনিয়া সাত্যকি তথা গেলেন সত্বর।।
 বৃক্ষের রক্ষণেতে আছিল বহু রক্ষ।
 হাতে অস্ত্র লইয়া ধাইল লক্ষ লক্ষ।।
 সাত্যকি বলেন প্রাণ যদি সবে চাহ।
 না করহ দ্বন্দ্ব তুমি ইন্দ্রেরে জানহ।।
 যাইয়া ইন্দ্রের ঠাঁই সবে গিয়া কহে।
 চল শীঘ্র দেবরাজ বিলম্ব না সহে।।
 গরুড় আরুঢ় যে মনুষ্য তিন জন।
 পারিজাত লইয়া ভাঙ্গিল সব বন।।
 শুনিয়া ইন্দ্রের চিত্তে হইল স্মরণ।
 পারিজাত লইতে আইল নারায়ণ।।
 ক্রোধে ইন্দ্র কলেবর কাঁপে থর থর।
 সহস্রলোচন চলে করিতে সমর।।
 নানা অস্ত্র লইয়া সমরে কৈল সাজ।
 হাতে বজ্র লইয়া চলিলা দেবরাজ।।
 শচী বলে যাব আমি সংহতি তোমার।
 কিরূপে হইবে যুদ্ধ দেখিব দোঁহার।।
 শুনি ইন্দ্র বসাইল বামে আপনার।
 জয়দেব সখা আর জয়ন্তকুমার।।
 হেনমতে আরোহণ কৈল চারিজন।
 চালাইয়া দিল গজ যথা নারায়ণ।।
 মহাভারতের কথা অমৃত লহরী।
 কাশীদাস কহে শুনি তরি ভববারি।।
     ------
   শ্রীকৃষ্ণের সহিত ইন্দ্রের যুদ্ধ।
   অস্ত্রে অস্ত্রে দুইজনে লাগিল বিরোধ।
 সত্যভামা দেখিয়া ইন্দ্রানী বলে ক্রোধে।।
 কহ না ভারতী কেন এত গর্ব্ব তোর।
 আসিয়াছ লইতে ভূষণ পুষ্প মোর।।
 মর্য্যাদা থাকিতে আগে যাহ বাহুড়িয়া।
 যথা ছিল পারিজাত তথায় রাখিয়া।।
 বামন হইয়া ইচ্ছা ধরিতে চন্দ্রমা।
 দিব প্রতিফল আজি ভাঙ্গিব গরিমা।।
 সত্যভামা বলে শচী মিছে কর গর্ব্ব।
 পরাক্রম তোমার জানি যে আমি সর্ব্ব।।
 শাশুড়ির কুল নরক নিল বলে।
 নারিল আনিতে তাহা কহি আখণ্ডলে।।
 লুটিয়া পুটিয়া স্বর্গ কৈল ছারখার।
 রাখিবারে না পারিল স্বামী যে তোমার।।
 মারিয়া সে নরকে ভাঙ্গিয়া তার পুরী।
 অদিতির কুণ্ডল আনিয়া দিল হরি।।
 পারিজাত পুষ্পে তোর কোন্ অধিকার।
 মথনে জন্মিল পুষ্প বিভাগ সবার।।
 তুমি পুষ্প ভূষণ করিবা একা কেনে।
 দেখ আজি লৈয়া যাব রাখহ কেমনে।।
 সতী শচী দোঁহাকার শুনিয়া কোন্দল।
 মুখে বস্ত্র দিয়া হাসে দেবতা সকল।।
 আনন্দ-লহরীতে নারদ মুনি হাসে।
 শুনি পুরন্দর কাঁপে অতিশয় রোষে।।
 উপেন্দ্র ইন্দ্রের যুদ্ধ হয় দেবধামে।
 ত্রিভুবন চমৎকার দোঁহার সংগ্রামে।।
 নানা অস্ত্র দুইজনে করেন প্রহার।
 পৃথিবীর মধ্যে পড়ে উল্কার আকার।।
 দর্পক জয়ন্ত যুদ্ধ কি দিব তুলন।
 শরজালে দুইজনে ছাইল গগন।।
 সাত্যকি তুলিল তরু গরুড় উপর।
 তার সহ জয়দেব করয়ে সমর।।
 খগেন্দ্র গজেন্দ্র যুদ্ধ না হয় বর্ণন।
 গর্জ্জনে বধির হৈল ত্রৈলোক্যের জন।।
 দশন শুণ্ডেতে গজ গরুড়ে প্রহারে।
 গরুড় গজেন্দ্র মুণ্ড নখেতে বিদরে।।
 গরুড়ের নখাঘাতে গজেন্দ্র অস্থির।
 খণ্ড খণ্ড হৈল, বহে সর্ব্বাঙ্গে রুধির।।
 না পারিল শূন্যেতে রহিতে গজবর।
 অজ্ঞান হইয়া পড়ে ভূমির উপর।।
 সর্ব্বাঙ্গে রুধির বহে কম্পে কলেবর।
 পড়িল মাতঙ্গরাজ পর্ব্বত উপর।।