পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/২১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কর্পূর-কুন্দ-ধবলেন্দু-জটাধরায়।

 একৈক ব্রম্ভাণ্ড যাঁর এক লোমকূপে।
 কোন্ দ্রব্য সম করি তৌলিবা তাঁহাকে।।
 এত বলি আনি এক তুলসীর দাম।
 তাতে দুই অক্ষর লিখিল কৃষ্ণনাম।।
 তুলের উপরে দিল তুলসীর পাত।
 নীচে হৈল তুলসী ঊর্দ্ধেতে জগন্নাথ।।
 দেখি উল্লসিত হৈল সকল রমণী।
 সাধু সাধু বলিয়া হইল মহাধ্বনি।।
 কৃষ্ণনাম গুণের নাহিক বেদে সীমা।
 বৈষ্ণব সে জানে কৃষ্ণনামের মহিমা।।
 শ্রীকৃষ্ণ হইতে কৃষ্ণনাম ধন বড়।
 জপহ কৃষ্ণের নাম চিত্ত করি দৃঢ়।।
 কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলিয়া পাইবে কৃষ্ণদেহ।
 কৃষ্ণের মুখের বাক্য নাহিক সন্দেহ।।
 নামপত্র লৈয়া মুনি তুষ্ট হৈয়া যান।
 সত্যভামা রত্নগণ ব্রাম্ভণে বিলান।।
 পারিজাত হরণের এই বিবরণ।
 এক্ষণে কহিব তবে সুভদ্রা-হরণ।।
 মহাভারতের কথা অমৃতের ধার।
 শুনিলে অধর্ম্মী হবে হেলে ভবপার।।
      ------
  সুভদ্রার গন্ধর্ব্ব বিবাহ।
   অতঃপর জিজ্ঞাসিল রাজা জন্মেজয়।
 পিতামহ কথা কহ শুনি মহাশয়।।
 বলেন বৈশম্পায়ন শুন নরপতে।
 ভদ্রা পার্থে স্বরম্বর হইল যেমতে।।
 বলিলেন ইহা যদি বীর ধনঞ্জয়।
 সত্যভামা তাহারে কহেন সবিনয়।।
 ঔষধ করিবে পার্থ স্ত্রীর এই বিধি।
 পুরুষ হইয়া তুমি কৈলে কি ঔষধি।।
 ভণ্ডতা করিয়া হইয়াছ ব্রম্ভচারী।
 মহৌষধি শিখিয়াছ ভুলাইতে নারী।।
 অর্জ্জুন বলেন স্তুতি করি সত্যভামা।
 নিশাশেষে নিদ্রা যাই করি আজি ক্ষমা।।
 জিতেন্দ্রিয় সত্যবাদী ব্রম্ভচারী আমি।
 তীর্থযাত্রা করি দেশ-দেশান্তরে ভ্রমি।।
 মিথ্যা অপবাদ কেন দিতেছ আমারে।
 শুনিয়া আমারে নিন্দা করিবে সংসারে।।
 বুঝিয়া পার্থের মন উঠেন ভারতী।
 সুভদ্রা বলেন কহ কোথা যাহ সতী।।
 সতী বলে আইসহ করিব উপায়।
 এত বলি ভদ্রা লৈয়া গেলেন আলয়।।
 নানা মায়া জানে মায়াবতী কামপ্রিয়া।
 সত্যভামা শীঘ্র তারে আনেন ডাকিয়া।।
 গুপ্তেতে কহেন সব ভদ্রার চরিত্র।
 রতি বলে ঠাকুরাণী এ কোন্ বিচিত্র।।
 জিতেন্দ্রিয় ব্রম্ভচারী পার্থ গর্ব্ব করে।
 অস্থি চর্ম্ম অনাহারী পারি মোহিবারে।।
 এত বলি সিন্দুর পড়িয়া দিল ভালে।
 মন্ত্র পড়ি দিল দুই নয়নে কজ্জলে।।
 যাহ দেবি এক্ষণে যাইতে পাবে বাট।
 হস্ত দিলে ঘুচিবেক দ্বারের কপাট।।
 শুনিয়া রতির বাক্য আনন্দ হইল।
 পুনরাপি ভদ্রা তথা গিয়া উত্তরিল।।
 হস্ত দিতে কপাটের খিলানি ঘুচিল।
 অর্জ্জুন সম্মুখে গিয়া ভদ্রা দাঁড়াইল।।
 বত্রিশ কলাতে যেন শোভিত চন্দ্রমা।
 চিত্রকর চিত্র যেন কনক প্রতিমা।
 কে তুমি বলিয়া ক্রোধে উঠিল ফাল্গুনী।
 স্ত্রী নহিলে খড়্গেতে কাটিতাম এখনি।।
 যাহ শীঘ্র হেথা হৈতে প্রাণ লৈয়া বেগে।
 নহিলে নাসিকা কাণ কাটীব যে খড়্গে।।
 এত বলি উঠিলেন হাতে লৈয়া ছুরি।
 দেখিয়া সুভদ্রা অঙ্গ কাঁপে থরথরি।।
 সিঁথায় সিন্দুর তার নয়নে কজ্জল।
 দেখিয়া পড়িল পার্থ হইয়া বিহ্বল।।
 হরিল পার্থের জ্ঞান কামের হিল্লোলে।
 তখনি উঠিয়া তারে করিলেন কোলে।।
 আইস বৈসহ তুমি ওহে প্রাণসখি।
 তোমার বদনে পূর্ণচন্দ্রমা নিরখি।।
 নহি নহি করি ভদ্রা মুখে বস্ত্র ঢাকে।
 জাতিনাশ কর কেন ছাড় ছাড় ডাকে।।