পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/২১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিভুজাং বেষ্টিতাং গোভির্ব্বসনাং চৌত চন্দনাং।।

 গোবিন্দের কথা যত করিলা স্বীকার।
 জাতিকুল গোবিন্দের নাহিক বিচার।।
 ভক্তি করি দুই কথা যেই জন কয়।
 না বিচারি ভাল মন্দ সেই বন্ধু হয়।।
 কল্য তার পুত্রে দুর্য্যোধন দিল সুতা।
 নাহিক তিলেক স্নেহ নব কুটুম্বিতা।।
 শিষ্য বলি তারে অতি স্নেহ আমি করি।
 এই হেতু সবে ক্রুদ্ধ তাহার উপরি।।
 কার শক্তি দিতে পারে ভদ্রা অর্জ্জুনেরে।
 যাহ মাতা আর কিছু না বল আমারে।।
 এতেক রামের বাক্য শুনিয়া রোহিনী।
 উঠি গেল দুইজনে বিষন্ন বদনী।।
 জন্মেজয় জিজ্ঞাসিল মুনিরাজ শুন।
 কোন্ কৃষ্ণ পুত্রে কন্যা দিল দুর্য্যোধন।।
 না কহ আমারে ইহা মুনি কি কারণ।
 কহ শুনি মুনিরাজ বড় ইচ্ছা মন।।
     ------
   দুর্য্যোধন কন্যা লক্ষণার স্বয়ম্বর।
   মুনি বলে অবধান কর নৃপবর।
 দুর্য্যোধন নৃপতির কন্যা স্বয়ম্বর।।
 ভানুমতী-গর্ভে জন্মে একই দুহিতা।
 রূপে গুণে অনুপমা সর্ব্বগুণান্বিতা।।
 ভুবনমোহিনী কন্যা সর্ব্ব সুলক্ষণা।
 সে কারণে তার নাম থুইল লক্ষণা।।
 বিবাহ সময় কন্যা দেখি নরবর।
 হৃদয়ে চিন্তিয়া তবে কৈল স্বয়ম্বর।।
 নিমন্ত্রিয়া আনাইল যত রাজগণে।
 পৃথিবীতে নিবাস আছিল যে যে স্থানে।।
 আইল যতেক রাজা কত লব নাম।
 রূপবন্ত গুণবন্ত কুলে অনুপম।।
 রথ গজ অশ্ব দেখি না হয় গণনে।
 বিবিধ বাদ্যের শব্দ না শুনি শ্রবণে।।
 ধ্বজ ছত্র পতাকায় ঢাকিল মেদিনী।
 চরণধুলিতে আচ্ছাদিত দিনমণি।।
 সবাকারে দুর্য্যোধন করিল সম্মান।
 বসিল নৃপতিগণ যার যেই স্থান।।
 নারদের মুখে বার্ত্তা পায় শাম্ব বীর।
 শুনিয়া কন্যার রূপ হইল অস্থির।।
 একেশ্বর রথে চড়ি করিল গমন।
 কিমতে পাইব কন্যা চিন্তে মনে মন।।
 অলক্ষিতে একান্তে রহিল রথোপরে।
 হেনকালে বাহির করিল লক্ষণারে।।
 অনুপম মুখ তার জিনি শরদিন্দূ।
 ঝলমল কুণ্ডল কমল প্রিয়বন্ধু।।
 সম্পূর্ণ মিহির জিনি অধর রঙ্গিমা।
 ভ্রুভঙ্গ অনঙ্গ চাপ জিনিয়া ভঙ্গিমা।।
 খঞ্জনে গঞ্জনে চক্ষু অঞ্জনে রচিত।
 শুকচঞ্চু নাসা শ্রুতি গৃধিনী নিন্দিত।।
 বিপুল নিতম্ব গতি জিনিয়া মরাল।
 চরণে কিঙ্কিণী আর নূপুর রসাল।।
 নির্ধুমাগ্নি কিম্বা যেন রচিলা বিদ্যুতে।
 বালসূর্য্য উদয় করিল পূর্ব্বভিতে।।
 দৃষ্টিমাত্র রাজগণ হারায় চেতন।
 দেখি জাম্ববতী সুতে পীড়িল মদন।।
 শীঘ্রগতি ধরি হাতে তুলিলেক রথে।
 চালাইয়া দিল রথ দ্বারকার পথে।।
 ধর ধর বলিয়া ধাইল সেনা সব।
 নানা অস্ত্র লয়ে ধায় যতেক কৌরব।।
 কৃষ্ণের নন্দন শাম্ব কৃষ্ণের সমান।
 টঙ্কারিয়া ধনুর্গুণ এড়ে দিব্য বাণ।।
 কাটিল অনেক সৈন্য চক্ষুর নিমেষে।
 নাহিক ভ্রুভঙ্গ বীর যুঝে অনায়েসে।।
 হস্তী অশ্ব রথ রথী পড়ে সারি সারি।
 যতেক মারিল যুদ্ধে লিখিতে না পারি।।
 ভয়েতে সম্মুখে তার কেহ নাহি রয়।
 ক্রোধে অগ্র হৈয়া বলে সূর্য্যের তনয়।।
 বালক হইয়া তোর এত অহঙ্কার।
 কন্যা হরি লৈয়া যাস্ অগ্রেতে আমার।।
 প্রতিফল ইহার পাইবি এইক্ষণে।
 এত বলি কর্ণবীর এড়ে অস্ত্রগণে।।
 ইন্দ্রজাল অস্ত্র এড়ে সূর্য্যের নন্দন।
 নারি নিবারিতে শাম্ব পড়িল বন্ধন।।