মুনিগনে প্রণমিল সূতের নন্দন।
আশীর্ব্বাদ করি সবে দিলেন আসন॥
সৌতি দেখি কৌতুকে বলেন মুনিগণে।
তব তাত সূত ছিল বহুশাস্ত্রজ্ঞানে॥
নানা চিত্র বিচিত্র কথন পুরাতন।
সূতমুখে বহু শাস্ত্র করেছে শ্রবণ॥
তাঁর পুত্র তুমি হে জিজ্ঞাসি সে কারণ।
কি জানহ কহ তুমি করিব শ্রবণ॥
ভৃগুবংশ উৎপন্ন হইল কোন্ মতে।
বিস্তারিয়া কহ দেব সবার সাক্ষাতে॥
সৌতি বলে অবধান কর মুনিগণ।
কহিব বিচিত্র কথা ব্যাসের বচন।
ব্রম্ভার নন্দন হইল ভৃগু মহামুনি।
পুলোমা নামেতে কণ্যা তাহার গৃহিনী॥
গর্ভবতী পুলোমা রাখিয়া নিজ ঘরে।
মহামুনি ভৃগু গেল স্নান করিবারে॥
হেনকালে তথা আসে দৈত্য একজন।
হরিবারে গুরুপত্নী করিয়া মনন॥
কামেতে পীড়িত চিত্ত অন্য নাহি ভয়।
ফলুমূল দিল কন্যা কিছু নাহি লয়॥
বলেতে ধরিব বলে বিচারিল মনে।
গৃহে প্রবেশিতে দেখে জলন্ত আগুনে॥
অগ্নি পানে চাহি বলে দানব দুরন্ত।
কহ বৈশ্বানর তুমি জান আদি অন্ত॥
ইহার জনক পূর্ব্বে বরিলেক মোরে।
না দিয়া বিবাহ মরে দিলেক ভৃগুরে॥
মিথ্যাবাদী ভৃগু নাহি করিল বিচার।
বিভা করি আনে কন্যা বরণ আমার॥
না কহিও মিথ্যা তুমি কহ সত্যবাণী।
ন্যায়েতে এ কন্যা হয় কাহার গৃহিনী॥
দানবের কথা শুনি অগ্নি হইল ভীত।
কহিব কেমনে মিথ্যা হইল চিন্তিত॥
সত্য কইলে কন্যা লয়ে যাইবে দানব।
ভাবিয়া তাহার প্রতি বলে জলোদ্ভব॥
যে কালে ইহার বাপ কহিলেক মোরে।
বিধিমতে বেদমন্ত্রে তোমা নাহি বরে॥
বিধিমতে বিভা কৈল ভৃগু মুনিবর।
ইহার জনক দিল আমার গোচর॥
ন্যায়েতে পুলোমা হইল ভৃগুর রমনী।
শুনিয়া দানব হইল জলন্ত আগুনি॥
বলে ধরি কন্যা ল'য়ে চলিল সত্ত্বর।
ভয়েতে বিকলা কন্যা কাঁপে থর থর॥
কান্দয়ে পুলোমা বহু বিলাপ করিয়া।
বালকে জন্মিল ক্রোধ গর্ভে থাকিয়া॥
দ্বিতীয় সূর্যের প্রায় হইল বাহির।
বিখ্যাত চ্যাবন নাম সেই মহাবীর॥
দৃষ্টিমাত্র ভৃগুপুত্র রাক্ষস দুর্জ্জন।
সেই দণ্ডে ভস্মীভূত কৈল তপোধন॥
হেনকালে তথায় আইল পদ্মযোনি।
ক্রন্দন নিবৃত্ত কৈল বলি প্রিয়বাণী॥
ক্রন্দনে বহিল অশ্রুজল পুলোমার।
খরতর স্রোতে নদী বহে সে অপার॥
দেখিয়া বিস্ময় চিত্ত হইলেন বিধি।
নাম তার দিল তবে বধূমতী নদী॥
বধূকে রাখিয়া গৃহে গেল প্রজাপতি।
পুত্র কোলে করিয়া আছয়ে দুঃখমতি॥
হেনকালে স্নান করে আসে ভৃগু তথা।
জিজ্ঞাসিল কেন তোর চিত্ত বিচলতা॥
স্বামীরে দেখিয়া কন্যা করিয়া রোদন।
কহিলেন যতেক দানব-বিবরন॥
তোমার তনয় এই কৈল প্রতিকার।
দানবে মারিয়া মোরে করিল উদ্ধার॥
এত বলি পুনঃ ভৃগু হেতু জিজ্ঞাসিল।
কি কারনে দানব ধরিয়া তোরে নিল॥
কন্যা বলে অচম্বিতে আসি দুষ্টমতি।
আমারে দেখিয়া জিজ্ঞাসিল অগ্নি প্রতি॥
বৈশ্বানর-বাক্যে মোরে নিলেক দুর্জ্জন।
শুনি শাপ দিল ভৃগু ক্রোধে অচেতন॥
আজি হতে সর্ব্বভক্ষ্য হও হুতাশন।
ত্রাসিত অনল শুনি ভৃগুর বচন॥
কোন দোষে ভৃগুমুনি শাপ দিলে মোরে।
যাহা জানি তাহা বলি আমি দানবেরে॥