পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/২২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষড়াননং মহাভাগং দৈত্যদর্প-নিসূদনং।।

 পতিত নহি যে আমি নহি কোন দোষী।।
 কোন হেতু মম যজ্ঞ না কর মহর্ষি।।
 দ্বিজগণ বলে ভূপ না দোষী তোমারে।
 শক্তি নাহি মোসবার যজ্ঞ করিবারে।।
 অপ্রমিত যজ্ঞ তব নাহি হয় শেষ।
 সহিতে না পারি আর অগ্নিতাপ ক্লেশ।।
 দ্বিজগণ বচন শুনিয়া নরপতি।
 করিল অনেকবিধ সবিনয় স্তুতি।।
 দ্বিজগণ বলে রাজা বল অকারণ।
 তব যজ্ঞ করে হেন না দেখি ব্রাম্ভণ।।
 ত্রিদশ ঈশ্বর শিবে সেবহ রাজন।
 তাঁহা বিনা যজ্ঞ করে না দেখি এমন।।
 দ্বিজগণ বাক্যে রাজা তপ আরম্ভিল।
 অনেক কঠোর করি মহেশে সেবিল।।
 শিব তুষ্ট হইয়া বলেন মাগ বর।
 রাজা বলে কৃপা যদি কৈলে মহেশ্বর।।
 মম যজ্ঞ করে হেন নাহিক ব্রাম্ভণ।
 আপনি আমার যজ্ঞ কর পঞ্চানন।।
 হাসিয়া বলেন শিব শুন মহারাজ।
 মম কর্ম্ম নহে যজ্ঞ ব্রাম্ভণের কাজ।।
 যজ্ঞফল যাহা চাও মাগহ রাজন।
 শুনিয়া নৃপতি বলে বিনয় বচন।।
 না করিয়া যজ্ঞফল নহে সুশোভন।
 যজ্ঞের উপায় করি কহ ত্রিলোচন।।
 মহেশ কহেন তব যজ্ঞে এত মন।
 মম অংশে আছে এক দুর্ব্বাসা ব্রাম্ভণ।।
 দুর্ব্বাসার যোগ্য যজ্ঞ করহ বিধান।
 সর্ব্ব মতে রক্ষা পায় দুর্ব্বাসার মন।।
 শিব আজ্ঞা পেয়ে রাজা গেল নিজ ঘর।
 যজ্ঞের সামগ্রী করে দ্বাদশ বৎসর।।
 সম্পূর্ণ সামগ্রী করি জানাইল হরে।
 শিব করিলেন আজ্ঞা দুর্ব্বাসা মুনিবরে।।
 শিবের আজ্ঞায় হৈল ক্রোধ তপোধনে।
 ছিদ্র কিছু পেয়ে আজি নাশিব রাজনে।।
 এত অহঙ্কার করে শ্বেতকি রাজন।
 যজ্ঞ হেতু আমারে করিল আবাহন।।
 মনে ক্রোধ করিয়া চলিল মুনিবর।
 যজ্ঞ করিবারে গেল সহ দণ্ডধর।।
 যজ্ঞ আরম্ভিল তবে মহাতপোধন।
 যখন যা মাগে মুনি যোগায় রাজন।।
 শ্বেতকি রাজার যজ্ঞ অতুল সংসারে।
 দুর্ব্বাসা আহুতি দেন মুষলের ধারে।।
 দ্বাদশ বৎসর যজ্ঞ কৈল অবিরাম।
 তিনলোকে চমৎকার শুনে যজ্ঞনাম।।
 সেই হবি খাইয়া হইল মন্দানল।
 ব্যাধিযুক্ত দেব অগ্নি হইল দুর্ব্বল।।
 অগ্নিদেব চলিলেন ব্রম্ভার সদন।
 ব্রম্ভারে আপন দুঃখ কৈল নিবেদন।।
 বিরিঞ্চি বলেন লোভে এ দুঃখ পাইলা।
 বহু হবি খেয়ে তুমি ব্যাধিযুক্ত হৈলা।।
 ইহার ঔষধ আছে শুন হুতাশন।
 খাণ্ডব বনেতে আছে বহু জীবগণ।।
 সেই বন দগ্ধ যদি পার করিবারে।
 তবে ত র'বে না রোগ তব কলেবরে।।
 ব্রম্ভার সদনে অগ্নি উপদেশ পাইয়া।
 অতি শীঘ্র লাগিল খাণ্ডব বনে গিয়া।।
 খাণ্ডবে আছিল বহু জীবের আলয়।
 অনল দেখিয়া সবে মানিল বিস্ময়।।
 কোটি কোটি মত্ত হস্তী সহিত হস্তিনী।
 নিভাইল অগ্নিকুণ্ড শুণ্ডে জল আনি।।
 খাণ্ডব দহিতে শক্ত নহে হুতাশন।
 ক্রোধচিত্তে গেল পুনঃ ব্রম্ভার সদন।।
 বিনয় করিয়া বহু বলে বিরিঞ্চিরে।
 না হৈল আমার শক্তি, বন দহিবারে।।
 মুহুর্ত্তেক থাকিয়া চিন্তিল প্রজাপতি।
 না কর ভয় অগ্নি স্থির কর মতি।।
 ব্রম্ভা বলেন আর না দেখি উপায়।
 স্থির হৈয়া থাক তুমি কাল গত প্রায়।।
 ইহার উপায় এক কহি যে তোমায়।
 সাবধান হ'য়ে শুন ইহার উপায়।।
 নর নারায়ণ জন্মিবেন মহীতলে।
 খাণ্ডব দহিবা দোঁহে সহায় হইলে।।