পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সর্ব্ববিঘ্নহরং দেবং হেরম্বং প্রণমাম্যহং।।


বৃষভ সাজায়ে বেগে, আনি নন্দী দিল আগে,

        নানা রত্নে করিয়া ভূষণ।

ক্রোধে কাঁপে ভূতনাথ, যেন কদলীর পাত,

        অতি শীঘ্র কৈল আরোহন।।

আগুদলে সেনাপতি, ময়ূর বাহনে গতি,

        শক্তি করে করি ষড়ানন।

গণেশ চড়িয়া মূষ, করে ধরি পাশাঙ্কুশ,

        দক্ষিন ভাগেতে ক্রোধ-মন।।

বামে নন্দী মহাকাল, করে শূল শাল তাল,

        পাছে ধায় ভৃঙ্গী তিন পাদ।

চলিলেন দেবরাজ, দেখিয়া শিবের সাজ,

        তিনলোক গণিল প্রমাদ।।

ক্ষণেকে ক্ষীরোদকূলে, উত্তরিলা সহ বলে,

        যথা সিন্ধু মথে সুরাসুর।

কহে কাশীদাস দেবে, দ্রুতগতি চল সবে,

        প্রণময়ে দেখিয়া ঠাকুর।।
              ----

মহাদেবের প্রতি দেবগণের স্তুতি করযোড়ে দণ্ডাইল সব দেবগণ। শিব বলে মথ সিন্ধু দাঁড়াইয়া কেন।। ইন্দ্র বলে মথন হইল দেব শেষ। নিবারিয়া মোদের গেলেন হৃষীকেশ।। একে ক্রোধে আছিলেন দেব মহেশ্বর। দ্বিতীয় ইন্দ্র বাক্যে কাঁপে কলেবর।। শিব বলে এত গর্ব্ব তোমা সবাকার। আমারে হেলন করি কর অহংকার।। রত্নাকর মথি রত্ন নিলে সব বাঁটি। কেহ চিত্তে না করিলে আছয়ে ধূর্জ্জটি।। যে করিলা তাহা কিছু না করিনু মনে। আমি মথিবারে বলি করহ হেলনে।। এতেক বলিল যদি দেব মহেশ্বর। ভয়েতে উত্তর কেহ না কহিল আর।। নিঃশ্বব্দে রহিল যত দেবের সমাজ। করযোড়ে বলয়ে কশ্যপ মুনিরাজ।। অবধান করহ দেব পার্ব্বতীর কান্ত। কহিব ক্ষীরোদসিন্ধু-মথন-বৃতান্ত।। পারিজাতমাল্য দুর্ব্বাসার গলে ছিল। স্নেহে সেই মাল্য মুনি ইন্দ্রগলে দিল।। গজরাজ-আরোহণে ছিল পুরন্দর। সেই মাল্য দেল তার দন্তের উপর।। সহজে মাতঙ্গ অনুক্ষণ মদে মত্ত। পশুজাতি নাহি জানে মাল্য মুনিদত্ত।। শুন্ডে জড়াইয়া ফেলাইল ভূমিতলে। দেখিয়া দুর্ব্বাসা ক্রোধে অগ্নিবৎ জ্বলে।। অহঙ্কারে ইন্দ্র মোরে অবজ্ঞা করিল। মোর দত্ত পুষ্পরাজি ছিঁড়িয়া ফেলিল।। সম্পদে হইয়া মত্ত তুচ্ছ কৈল মোরে। দিল শাপ লক্ষ্মীহত হবে পুরন্দরে।। ব্রম্ভশাপে লোকমাতা প্রবেশিল জলে। লক্ষ্মী বিনা কস্ট হৈল ত্রৈলোক্যমণ্ডলে।। লোকের কারণে ব্রম্ভা কৃষ্ণে নিবাদিল। সমুদ্র মথিতে আজ্ঞা নারায়ণ কৈল।। এই হেতু ক্ষীরোদ মথিল মহেশ্বর। শেষ মথনের দড়ি মথিল মন্দর।। অনেক উৎপাত হইল বরুণের পুরে। লক্ষ্মী দিয়া স্তব বহু কৈল গঙ্গাধরে।। নিবারিয়া মথন গেলেন নারায়ণ। পুনঃ তুমি আজ্ঞা কর মথন কারণ।। বিষ্ণুবলে বড় বলী আছিল অমর। এবে বিষ্ণুতেজ বিনা শ্রান্ত কলেবর।। দ্বিতীয় মথনের দড়ি নাগুরাজ শেষ। সাক্ষাতে আপুনি তার দেখ সব ক্লেশ।। অঙ্গের যতেক হাড় সব হইল চুর। সহস্র মুখেতে লালা বহিছে প্রচুর।। বরুণের যত কষ্ট না হয় গণন। আর আজ্ঞা নাহি কর করিতে মথন।। শিব বলে আমা লাগি মথ একবার। আগমন অকারণ না হবে আমার।। শিববাক্য কার শক্তি লঙ্ঘিবারে পারে। পুনরাপি মথন করিল সুরাসুরে।।