প্রণাম--জবাকুসুম সঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিং।
সুধা আনিতে গরুড়ের স্বর্গে গমন ও গজ-কূর্ম্মের বিবরণ
অরুণে লইয়া স্কন্ধে বিনতা-নন্দন।
সূর্য্যরথে যত্ন করে করিল স্থাপন।। অশ্ব্দড়ি কড়িয়ালি ধরি বাম হাতে। রহিল অরুণ সে সারথি হইয়া রথে।। সূর্য্যরথে ভাইকে রাখিয়া পক্ষীরাজ। জননীর ঠাঁই গেল ক্ষীর-সিন্ধু মাঝ।। দুঃখিত জননী দেখি মলিন-বদন। মায়ের নিকটে গিয়া করিল বন্দন।। পুত্র দেখি বিনতার খন্ডিল বিষাদ। আশ্বাসিয়া গরুড়েরে করে আশীর্ব্বাদ।। হেনকালে কদ্রু দাকি বলে বিনতারে। রম্যক দ্বীপেতে চল স্কন্ধে লয়ে মোরে।। রম্যক দ্বীপেতে মোর পুত্রের আলয়। ত্বরিতে লইয়া চল বিলম্ব না সয়।। কদ্রুরে করিল স্কন্ধে বিনতাসুন্দরী। নাগগণে গরুড় লইল স্কন্ধে করি।। নাগগণে স্কন্ধে করি গরুড় উড়িল। চক্ষুর নিমেষে সূর্য্য-মণ্ডলে চলিল।। সূর্য্যের কিরণে পোড়ে যত নাগগণ। নাগমাতা দেখে পুড়ি মরিছে নন্দন।। পুড়ি মরে নাগগণ নাহিক উপায়। আকুল হইয়া কদ্রু স্মরে দেবরায়।। ত্রৈলোক্যের নাথ তুমি দেব শচীপতি। আমার কুমারগণে কর আব্যাহতি।। বহুবিধ স্তুতি কদ্রু কৈল পুরন্দরে। ইন্দ্র আজ্ঞা কৈল ডাকি সব জলধরে।। ততক্ষণে মেঘগণ ঢাকিল আকাশ। জল বৃষ্টি করিয়া ভরিল দিশপাশ।। তবে খগপতি সব ল'য়ে নাগগণে। রম্যক দ্বীপেতে বীর গেল ততক্ষণে।। নাগের আলয় দ্বীপ অতি মনোহর। কাঞ্চনে মণ্ডিত গৃহ প্রবাল প্রস্তর।। ফল ফুলে সুশোভিত চন্দনের বন। মলয় সুগন্ধি বায়ু বহে অনুক্ষণ।। আপনার আলয়ে বসি নাগগণ। গরুড়ে চাহিয়ে তবে বলিল বচন।। উড়িবার শক্তি বড় আছয়ে তোমার। চড়িয়া তোমার স্কন্ধে করিব বিহার।। আর এক দ্বীপে ল'য়ে চল খগেশ্বর। শুনিয়া গরুড় গেল মায়ের গোচর।। গরুড় কহিল মাতা কহ বিবরণ। পুনরাপি স্কন্ধে নিতে বলে নাগগণ।। প্রভূ যেন আজ্ঞা করে সেবকের তরে। কি হেতু এমন বাক্য বলে বারে বারে।। একবার স্কন্ধে কৈনু তোমার আজ্ঞায়। পুনরাপি বলে দেহে সহনে না যায়।। বিনতা বলিল পুত্র দৈবের লিখন। আমি তার দাসী তুমি তাহার নন্দন।। গরুড় বলল মাতা কহ বিবরণ। তুমি তার দাসী হৈলে কিসের কারণ।। বিনতা বলিল পূর্ব্বে বিমাতার সনে। উচ্চৈঃশ্রবা হেতু আমি হারিলাম পণে।। দাসীপণে সেই হইতে খাটি তার আমি। তেকরণে দাসীপুত্র হইলা বাপু তুমি।। এত শুনি মহাক্রোধে কহিল সুপর্ণ। সঘনে নিশ্বাস ছাড়ে চক্ষু রক্তবর্ণ।। মায়ে এড়ি গেল তবে বিমাতা নিকটে। কদ্রুর নিকটে বীর কহে করপুটে।। আজ্ঞা কর জননী গো করি নিবেদন। কিমতে মায়ের হবে দাসীত্ব মোচন।। কদ্রু বলে মুক্ত যদি করিবে জননী। তবে তুমি অমৃত আমারে দেহ আনি।। এতশুনি খগবর আনন্দ অপার। মায়ের নিকটে বীর গেল আরবার।। যা বলিল সর্পমাতা মায়েরে কহিল। না ভাবিহ আর, দুঃখ অবসান হৈল।। এখনি আনিব সুধা চক্ষু পালটিতে। ক্ষুধায় উদর জ্বলে দেহ কিছু খেতে।। জননী বলিল যাও সমুদ্রের ধারে। তথা আছে নিশাচর খাও সবাকারে।।