বিষ্ণুর ধ্যান--ধেয়ঃ সদা সবিতৃমণ্ডল-মধ্যবর্ত্তী
তুমি ও কচ্ছপ হও জলের ভিতরে। দুই জনে শাপ দিলেন দোঁহারে।। গজ গেল অরণ্যে কচ্ছপ গেল জলে। ভাই সহ বিসম্বাদ কৈল হেন ফলে।। পরবাক্যে ভাই সহ করে যে বিবাদ। অতি ক্লেশ জন্মে পরে হয় ত প্রমাদ।। সেই সে কচ্ছপ আছে জলের ভিতর। যুড়িয়া যোজন দশ তার কলেবর।। তাহার দ্বিগুন হয় হস্তীর শরীর। নিত্য আসি যুদ্ধ করে সরোবর-তীর।। সেই গজ-কূর্ম্ম গিয়া করহ ভক্ষণ। সর্ব্বত্র মঙ্গল হবে বিনতা ন্ন্দন।। ত্রিভূবন-পরাজয়ী হও মহাবীর। ব্রম্ভা বিষ্ণু শিব তব রাখুন শরীর।। কশ্যপের আজ্ঞা পেয়ে গরুড় সত্বর। চক্ষুর নিমেষে গেল যথা সরোবর।। আকাশ হইতে দেখে বিনতানন্দন। বন হইতে গজ নিঃসরিল ততক্ষণ। সরোবর তীরে আসি করিলা গর্জ্জন।। ক্রোধ করি কূর্ম্ম দেখা দিল ততক্ষণ।। মহাযুদ্ধ দুইজনে কহনে না যায়। অন্তরীক্ষে থাকি তাহা দেখে খগরায়।। এক নখে গজ ধরি কূর্ম্ম আর ন'খে। চক্ষুর নিমিষে উড়ি গেল তপোলোকে।। কোথায় খাইব বলি ভাবে মনে মন। বৃক্ষ নানা জাতি দেখে পরশে গগন।। রোহিনী নামেতে বৃক্ষ অতি উচ্চতর। জানিয়া গরুড়ে ডাকি বলিল সত্ত্বর।। মোর ডাল দেখ শত যোজন বিস্তার। সুস্থ হ'য়ে ইথে বসি করহ আহার।। বৃক্ষের বচন শুনি বিনতা নন্দন। ডালেতে বসিল গিয়া করিতে ভক্ষণ।। ভাঙ্গিল বৃক্ষের ডাল গরুড়ের ভরে। বালখিল্য মুনিগণ তাহে তপ করে।। শাখা ধরি অধোমুখে আছে মুনিগণ। দেখিয়া হইল ভীত বিনতা নন্দন।। ফেলিল ভুমিতে ডাল মরিবেক মুনি। ঠোঁটেতে ধরিল ডাল মনে ভয় গণি।। ঠোঁটেতে ধরিল ডাল গজ-কূর্ম্ম নখে। বহুদিন গরুড় উড়িল হেন পাকে।। দেখিল কশ্যপ গন্ধমাদন পর্ব্বতে। গরুড়ের মুখে ডাল দেখি বিপরীতে।। বালখিল্য মুনিগণ হতেছে লম্বিত। তার ভয়ে গরুড় হইল সবিস্মিত।। কশ্যপ বলেন পুত্র করিলা কি কাজ। হের দেখ ডালে আছে মুনির সমাজ।। অঙ্গুষ্ঠপ্রমাণ ষাটি সহস্র ব্রাম্ভণ। উপায় করহ ক্রোধ নহে যতক্ষণ।। তবে ত কশ্যপ মুনি করে যোড়কর। মুনিগণে নতিস্তুতি করিল বিস্তর।। এই ত গরুড় হয় সবাকার হিত। তেকারণে ক্রোধ তারে হয় না উচিত।। কশ্যপের স্তবে তুষ্ট হ'য়ে ঋষিগণ। হিমালয় গিরি পরে করিল গমন।। খগেশ্বর তবে জিজ্ঞাসিল কশ্যপেরে। ফেলিব কোথায় ডাল আজ্ঞা কর মোরে।। কশ্যপ বলিল যাও কিংপুরুষ গিরি। জীব জন্তু নাহি সেই পর্ব্বত উপরি।। কশ্যপের আজ্ঞা পেয়ে বার খগেশ্বর। ফেলিল সে ডাল ল'য়ে পর্ব্বত উপর। গজ-কূর্ম্ম খাইলেক পর্ব্বতে বসিয়া।। অমৃত আনিতে যায় সুতৃপ্ত হিয়া।। মহাতেজে গগনে উঠিল খগেশ্বর। পাখসাটে উড়ি গেল পর্ব্বত-শিখর।। দিনকর আচ্ছাদিল হৈল অন্ধকার। অমরনগরে হৈল উৎপাত অপার।। উল্কাপাত নির্ঘাত হইছে ঘন ঘন। ঘোর বায়ু মেঘে করে রক্ত বরিষণ।। শচীপতি বৃহষ্পতি প্রতি জিজ্ঞাসিল। এত আমঙ্গল কেন স্বর্গেতে হইল।। বৃহস্পতি বলিল তোমার পূর্ব্ব-পাপে। আইসে গরুড় পক্ষী অদ্ভুত প্রতাপে।।