এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
হারী হিরণ্ময়বপুর্ধৃত শঙ্খচক্রঃ।।
এইমত দোঁহাকারে দোঁহে বর দিয়া। তথা হৈতে চলে বীর অমৃত লইয়া।। পবন অধিক হয় গরুড়ের গতি। দৃষ্টিমাত্রে সুরলোকে গেল মহামতি।। আছিল পরম ক্রোধে দেব পুরন্দর। মহাতেজে মারে বজ্র গরুড় উপর।। হাসিয়া গরুড় বলে শুন দেবরাজ। বজ্র অস্ত্র ব্যর্থ হৈলে পাবে বড় লাজ।। মুনি-অস্থিজাত আস্ত্র অব্যর্থ সংসারে। শত অস্ত্র হৈলে মম কি করিতে পারে।। তথাপি মুনির বাক্য করিতে পালন। একগুটি পাখা দিব বজ্রের কারণ।। এত বলি এক পাখা ঠোঁটে উপড়াইয়া। ইন্দ্র মারে বজ্র তাতে দিল ফেলাইয়া।। দেখিয়া বিস্ময়াপন্ন দেব পুরন্দর। সবিনয়ে বলে শুন ওহে খগেশ্বর।। তোমার চরিত্র দেখি হইলাম প্রীত। সখ্য করিবারে চাহি তোমার সহিত।। গরুড় বলিল ইচ্ছা যদি কর তুমি। আজি হৈতে হইনু তোমার সখা তুমি।। ইন্দ্র বলে সখা এক করি নিবেদন। তোমার তেজের কথা না যায় কথন।। কত বল ধর তুমি কহ সত্য করি। তোমার বিক্রম দেখে তিন লোকে ডরি।। ইন্দ্রের বচন শুনি বল পক্ষীরাজ। আপনি আপন গুণ কহিবারে লাজ।। তুমি সখা জিজ্ঞাসিলে কহিতে যুয়ার। আমার বলের কথা শুন দেবরায়।। সাগর সহিত ক্ষিতি এক পক্ষে করি। আর পক্ষে তোমা সহ অমরনগরী।। দুই পক্ষে লইয়া উড়িব বায়ুভরে। শ্রম না হইবে মম সহস্র বৎসরে।। শুনিয়া হইল স্তব্ধ দেব পুরন্দর। ইন্দ্র বলে ইহা সত্য মানি খগেশ্বর।। যতেক বলিলে সব সম্ভবে তোমারে। এক নিবেদন সখা কহি আরবারে।। সুধা লৈয়া যাও তুমি কিসের কারণ। এই অমৃত যে হ্য় সবার জীবন।। গরুড় বলিল মোর মাতা দাসীপণ। সুধা গেলে হবেক সকল মোচন।। সুধা নিতে বলিল যতেক সর্পগণ। সেই হেতু লই সুধা সহস্রলোচন।। ইন্দ্র বলে হেন কথা যুক্তিযুক্ত নয়। মহাদুষ্ট নাগগণ সৃষ্টি করে লয়।। তোমার হইলে শত্রু হয়ত' আমার। শত্রুকে অমৃত দিতে না হয় বিচার।। হেন জনে সুধা দিবে কিসের কারণ। উপায় করিয়া মায়ে করিবে মোচন।। জগতের প্রাণ রাখ আমার বচন। সদয় হইয়া সুধা কর প্রত্যার্পণ।। গরুড় বলিল সখা এ নহে বিচার। মায়ের অগ্রেতে করিলাম অঙ্গীকার।। এখনি আনিব সুধা বলিয়াছি বাণী। হেন সুধা কেমনে ছাড়িব বজ্রপাণি।। তবে এক বাক্য সখা করহ বিচার। তব বাক্য রয় হয় মায়ের উদ্ধার।। সুধা ল'য়ে দিব আমি যত সর্পদলে। সুযোগ বুঝিয়া তুমি হরিবে কৌশলে।। পেয়ে সুধা নাহি পাবে দুষ্ট সর্পগণ। লাভ হৈতে জননীর দাসত্ব মোচন।। এই যুক্তি লয় মনে সখা সুরপতি। শুনি দেবরাজ হৈল হরষিত-অতি।। ইন্দ্র বলে তুষ্ট হইনু তোমার বচনে। বর ইচ্ছা থাকে যদি মাগ মম স্থানে।। গরুড় বলিল আমি কি মাগিব বর। আমার অসাধ্য কিবা ত্রৈলোক্য ভিতর।। তথাপি তোমার বাক্য করিব পালন। বর দেহ ফণী মোর হইবে ভক্ষণ।। কপটেতে দুষ্টগণ মায়ে দুঃখ দিল। গরুড়েরে বর দান বাসব করিল।। বর পেয়ে তথা হৈতে চলে খগেশ্বর। ছায়ারূপে সয়ঙ্গতে চলিলা পুরন্দর।।