পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তীর্থাস্পদং শিব-বিরিঞ্চি নুতং শরন্যং।

 জনমেজয়ের যজ্ঞের মন্ত্রণা।
    মন্ত্রিগণ বলে রাজা কর অবধান।
 প্রতাপে তোমার বাপ পণ্ডব সমান।।
 মৃগয়া করিতে রাজা ভ্রমে বনে বন।
 একদিন হৈল তথা দৈব-নির্ব্বন্ধন।।
 বিন্ধিয়া হরিণ রাজা পাছে পাছে ধায়।
 আচম্বিতে দ্বিজ এক দেখিল তথায়।।
 ক্ষুধায় আকুল রাজা জিজ্ঞাসিল তাঁরে।
 মৌনী ছিল, কিছু নাহি বলিল রাজারে।।  
 ক্রোধে মৃতসাপ তাঁর গলে জড়াইল।
 কিছু না বলিল মুনি রাজা ঘরে গেল।।
 শৃঙ্গা নামে ঋষিপুত্র দিল শাপবাণী।
 সপ্তম দিবসে নৃপে দংশিবেক ফণী।।
 কাশ্যপ নামেতে মুনি সর্ব্বমন্ত্রে গুণী।
 রাজারে দংশিবে সর্প লোকমুখে শুনি।।
 বাঁচাইতে এসেছিল হস্তিনা-নগরে।
 পথে দেখা পাইল তক্ষক বিষধরে।।
 নিজ নিজ গুণ পরীক্ষিতে দুইজনে।
 ভস্ম হ'য়ে গেল বৃক্ষ তক্ষক-দংশনে।।
 পুনরপি কশ্যপ মন্ত্রবলে রাখিল।
 সে কারণে ধন তারে ফণীবর দিল।।
 ধন পেয়ে দরিদ্র ব্রাম্ভণ বাহুড়িল।
 কপটে তক্ষক আসি দংশন করিল।।
 এত শুনি নৃপ জিজ্ঞাসিল আরবার।
 সত্য কহ, শুনিয়া করিব প্রতিকার।।
 কাশ্যপে তক্ষকে কথা হইল যখন।
 এ সকল বার্ত্তা শুনিলেক কোনজন।।
 মন্ত্রীগণ বলে সর্প যে বৃক্ষ দংশিল।
 কাষ্ঠ হেতু সেই বৃক্ষে একজন ছিল।।
 বৃক্ষের সহিত সেই ভস্ম হৈয়া গেল।
 পুনরাপি বৃক্ষ সহ জীবন লভিল।।
 আশ্চর্য্য শুনিনু যত কাশ্যপের কথা।
 মন্ত্রবলে রাখিতে পারিত মোর পিতা।।
 দারুণ তক্ষক সর্প তারে ফিরাইল।
 তক্ষক আমার বৈরী এবে জানা গেল।।
 বিপ্রের বচনে আসি করিল দংশন।
 কাশ্যপেরে ফিরাইল কিসের কারণ।।
 ধণ দিয়া করে লোকে পর উপকার।
 মোর বাপে ধন দিয়া করিল সংহার।।
 পুনরাপি রাজা কহে শুন মন্ত্রীগণ।
 সত্য কহিলেক যত উতঙ্ক ব্রাম্ভণ।।
 উতঙ্কের প্রিয় আর মম পিতৃকর্ম্ম।
 ধ্বংসিব নাগের কুল এই মোর ধর্ম্ম।।
 এতেক বলিয়া রাজা আনিল পুরোহিত।
 আর যত দ্বিজগণ আনিল ত্বরিত।।
 সবারে কহিল রাজা নিজ প্রয়োজন।
 মোর পিতৃবৈরী আছে যত সর্পগণ।।
 সর্প বিনাশিতে চেষ্টা হইল আমার।
 সবংশে সকল নাগ করিব সংহার।।
 বিষজালে যেমন পুড়িল মোর বাপ।
 সেইরূপ আগ্নিতে পোড়াও সব সাপ।।
 বিপ্রগণ বলে রাজা আছয়ে উপায়।
 সর্প সংহারিতে যজ্ঞ কর কুরুরায়।।
 তোমার নামেতে মন্ত্র আছে বেদমতে।
 তোমা বিনা শক্তি নাহি অন্যের করিতে।।
 এত শুনি নরপতি আনিন্দিত মন।
 আজ্ঞা দিল মন্ত্রীগণে যজ্ঞের কারণ।।
 পাইয়া রাজার আজ্ঞা যত মন্ত্রীগণ।
 যজ্ঞের যতেক দ্রব্য আনিল তখন।।
 পত্রেতে লিখিল দ্রব্য বলে মন্ত্রীগণ।
 দেশ-দেশান্তর হৈতে আসে সর্ব্ব্জনে।।
 সঙ্কল্প করিল রাজা শাস্ত্রের বিধান।
 শিল্পকারে যজ্ঞস্থান করিল নির্ম্মান।।
 যজ্ঞকুণ্ড করিল সে শিল্পী বিচক্ষণ।
 রাজারে ভবিষ্য কথা কৈল নিবেদন।।
 দেখিলাম রাজা যজ্ঞ পূর্ণ না হইবে।
 ব্রাম্ভণ হইতে তব সব বিঘ্ন হবে।।