এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
ভৃত্যার্ত্তিহং প্রণতপাল ভবাব্ধি পোতং।
শুনি নরপতি তবে বলেন দ্বারীগণে। যজ্ঞকালে আসিতে না দিবে কোনজনে।। মহাভারতের কথা অমৃত সমান। কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান।।
----
জন্মেজয়ের সর্পযজ্ঞ। ঘৃত বস্ত্র যব ধান্য কাষ্ঠ রাশি রাশি। আনাইল যজ্ঞ হেতু কত দ্বিজ ঋষি।। হোতা চণ্ড ভার্গব নামেতে দ্বিজবর। সদাচার ব্রতী দ্বিজ আইল বিস্তর।। ঋষি সে নারদ ব্যাস মার্কণ্ড পিঙ্গল। উদ্দালক সহ আইল সে দেবল।। বিপ্রগণ বেদমন্ত্রে জ্বালিল অনল। লইয়া নাগের নাম যজ্ঞকুণ্ডে তুলে।। পর্ব্বতপ্রমাণ অগ্নি দেখে লাগে ভয়। মন্ত্রবলে আসি কুণ্ডে সবে ভস্ম হয়।। কেহ অশ্ব-উষ্ট্র প্রায় কেহ হস্তী প্রায়। কেহ কৃষ্ণবর্ণ কেহ শুক্লবর্ণ কায়।। জলমধ্যে গর্ত্তমধ্যে কোটরে প্রবেশে। যজ্ঞস্থানে টানি আনে বান্ধি মন্ত্রপাশে।। একশত দুইশত পঞ্চশত শির। পর্ব্বত জিনিয়া কার' বিপুল শরীর।। মস্তকে লাঙ্গুল শিরে জিহ্বা লড়বড়ি। কাতর হৈয়া কেহ যায় গড়াগড়ি।। সঘনে নিঃশ্বাস ছাড়ে হইয়া ব্যাকুল। মহানন্দে গর্জ্জি সবে পুড়য় অনল।। দুর্গন্ধ হইল যত পুরিল সংসার। অদ্ভূত দেখিরা সবে হইল চমৎকার।। যখন প্রতিজ্ঞা করিলেন জন্মেজয়ে। ইন্দ্রস্থানে তক্ষক শরণ নিল ভয়ে।। কহিল বৃত্তান্ত যত যজ্ঞের কারণ। জন্মেজয় যজ্ঞ করে সর্পের নিধন।। প্রাণভয়ে শরণ লইল সুরেশ্বরে। শুনিয়া অভয় তারে দিল পুরন্দরে।। নির্ভয় হইয়া তথা তক্ষক রহিল। এখানে নাগের কুল উৎপন্ন হইল।। যজ্ঞে ভস্ম হয় যত নাগের সমাজ। চমকিত হইল বাসুকি নাগরাজ।। ভয়েতে কম্পিত তনু মুর্চ্ছা ঘনে ঘন। ভগিনীরে ত্বরিতে করিল নিবেদন।। ভ্রাতারে আকুল দেখি কান্দয়ে নাগিনী। পুত্রেরে ডাকিয়া কহে সকরুণ বাণী।। ভ্রাত্তৃগণে আমার হইল মাতৃশাপ। সেই হেতু আমারে পাইল তোর বাপ।। মম ভ্রাতৃগণ হয় মাতুল তোমার। এ মহাপ্রলয়ে প্রাণ রাখহ সবার।। আস্তিক বলিল মাতা কন্দ কি কারণ। যে আজ্ঞা করিবা তাহা করিব এখন।। জরৎকারী বলে যজ্ঞ করে জন্মেজয়। মন্ত্রবলে সকল ভূজঙ্গ করে ক্ষয়।। মরিছ মাতুলবংশ করহ উদ্ধার। তোমা বিনা ত্রিভূবনে কেহ নাহি আর।। আস্তিক বলিল মাতা না কর বিষাদ। এখনি খণ্ডিব আমি নাগের প্রমাদ।। বাসুকিরে বল তুমি হইতে নির্ভয়। এখনি করিব ত্রাণ নাহিক সংশয়।। মাতুলে নির্ভয় করি চলিল ত্বরিত। জন্মেজয় যজ্ঞস্তানে হৈল উপনীত।। প্রবেশ করিতে দ্বারী নাহি দেয় তারে। ক্রোধেতে আস্তিক কহে কম্পে ওষ্ঠাধরে।। ব্রাম্ভণে হেলন কর মূঢ় দুরাচার। নাহি জান এই হেতু হইবে সংহার।। আস্তিকের ক্রোধ দেখি দ্বারী কম্পবান্। দ্বার ছাড়ি প্রণমিল হ'য়ে সাবধান।। তথা হৈতে আস্তিক গেলেন যজ্ঞস্থান। বেদধ্বনি করি সভা কৈল কম্পমান।। সভার ব্রাম্ভণগণে করিল বন্দন। নৃপতিরে বলে তবে আশীষ বচন।। মহাভারতের কথা অমৃত-লহরী। কাশীরাম কহে সাধু পিয়ে কর্ণ ভরি।।