এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতিঃ পরমেশ্বর।
তোমার বচন আমি লঙ্ঘিতে না পারি। তব কার্য্য সিদ্ধ হ'ক বাঁচি কিংবা মরি।। কামদেব বায়ু দেহ আমার সহায়। তবে যেই মত হয় করিব উপায়।। ইন্দ্র আজ্ঞা কৈল সঙ্গে যাহ দুই জন। দেবরাজ-আজ্ঞা পেয়ে চলিল তখন।। হেমন্ত পর্ব্বতের নিকট মুনিবর। মুনি দেখি মেনকার কাঁপিল অন্তর।। অতিশয় সুবেশা হইয়া বিদ্যাধরী। মুনির নিকটে ক্রীড়া করে মায়া করি।। হেনকালে বায়ু বহে অতি খরতর। উড়াইয়া বস্ত্র তার ফেলিল অন্তর।। আস্তে ব্যাস্তে মেনকা উঠিয়া বস্ত্র ধরে। বিবিধ প্রকারে পবনে নিন্দা করে।। এ সকল কৌতুক দেখিল মুনিবর। শরীরেতে ভেদিল কামের পঞ্চশর।। মেনকা ধরিয়া মুনি নিল নিজ দেশ। কামে মত্ত নিত্য করে শৃঙ্গার বিশেষ।। হেনমতে বহুদিন গেল ক্রীড়ারসে। তপ জপ সকল ত্যাজিল কামবশে।। একদিন সন্ধ্যা হেতু বিশ্বামিত্র মুনি। মেনকারে ডাকি বলে জল দেহ আনি।। শুনিয়া মেনকা আসি বলিল বচন। এত দিনে ভাল সন্ধ্যা হইল স্মরণ।। এত শুনি মুনি হৈল কুপিত অন্তর। দেখিয়া মেনকা ভয়ে পলায় সত্বর।। হ'য়েছিল যেই গর্ভ মুনির ঔরসে। অরণ্যে প্রসব করি গেল নিজ দেশে।। মুনিতপ নষ্ট করি গেল নিজ স্থানে। আমারে ফেলিয়া গেল বিজন কাননে।। সিংহ ব্যাঘ্র পশুগণ হিংসা নাহি করে। পক্ষিগণ বেড়িয়া যে রহিল আমারে।। তপস্যা করিতে গেল মুনি সেই বনে। অনাথা দেখিয়া তাঁর দয়া হৈল মনে। গৃহে আনি পালন করিল মুনিবর। তেঁই আমি তাঁর কন্যা শুন দণ্ডধর।। শকুনে বেড়িয়া ছিল নিকুঞ্জকাননে। শকুন্তলা নাম মুনি রাখে তেকারণে।। আদিপর্ব্বে দিব্য শকুন্তলা-উপাখ্যান। কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান।।
------
দুষ্মন্ত রাজার সহিত শকুন্তলার বিবাহ।
রাজা বলে কন্যা তুমি পরমাসুন্দরী। রাজযোগ্য ধনি তুমি হও মোর নারী।। গাছের বাকল ত্যাজি পর পট্টবাস। রত্ন অলঙ্কার পর যেই অভিলাষ।। এত শুনি লজ্জিতা হইয়া শকুন্তলা। মৃদুভাষে ভূপতিরে কহিতে লাগিলা।। শুন রাজা আমি করিলাম অঙ্গীকার। পিতা আসি সম্প্রদান করিবে আমার।। রাজা বলে মুনিবর বিলম্বে আসিবে। ক্ষণেক বিলম্ব হৈলে মম মৃত্যু হবে।। বেদোক্ত বিবাহ হয় অষ্টম প্রকার। গান্ধর্ব্ব বিবাহ লিখে ক্ষত্রিয়-আচার।। আপনি বিবাহ কর যদ্যপি আমারে। মুনির বচনে দোষ না হবে তোমারে।। বেদের বিহিত আছে যথা পূর্ব্বাপর। গন্ধর্ব্ব বিবাহ হবে শুন নৃপবর।। আমার উদরে যেই জন্মিবে কুমার। সত্য কর তুমি তারে দিবে রাজ্যভার।। কামে মত্ত ভূপতি করিল অঙ্গীকার। গান্ধর্ব্ব বিবাহ করি ভুঞ্জিল শৃঙ্গার।। তবে নরপতি বলে কন্যারে চাহিয়া। রাজ্যেতে লইব তোমা লোক পাঠাইয়া।। এত বলি নরপতি করিল গমন। যাইতে যাইতে পথে চিন্তে মনে মন।। কি কহিবে মুনিরাজ আসি নিজ ঘরে। দুষ্মন্ত নিতান্ত ভীত ভাবিয়া অন্তরে।। সসৈন্যে আপন দেশে গেল নরপতি। কতক্ষণে গৃহে আসে মুনি মহামতি।।