এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
নবযৌবন সম্পন্নাং সর্ব্বাভরণ-ভূষিতাং।
পূর্ব্বের সৌহৃদ্য রাখ আমার বচন। এত বলি কচ হৈল বিষন্ন-বদন।। কচ বলে দেবযানী এ নহে উচিত। তোমায় আমায় হেন না হয় পীরিত।। যেই শুক্র হইতে তোমার জন্ম হয়। সেই শুক্র হইতে আমার জ্ঞানোদয়।। সহোদরা তুমি হও সহজে আমার।। কিমতে এমন বল করি কদাচার। আজ্ঞা কর যাই আমি আপন আলয়। শুনি দেবযানী কোপ করে অতিশয়।। স্ত্রী হইয়া বারে বারে করিনু বিনয়। না রাখ আমার বাক্য তুমি দুরাশয়।। যত বিদ্যা তোরে পড়াইল মোর বাপে। সকল নিষ্ফল তোর হবে মোর শাপে।। কচ বলে দেবযানী করিলা কি কর্ম্ম। বিনা দোষে দিলা শাপ নহে এই ধর্ম্ম।। ব্রাম্ভণের শ্রেষ্ঠ শুক্র তুমি কন্যা তার। মোর শাপে ক্ষত্র-ভর্ত্তা হইবে তোমার।। মোরে শাপ দিলা তুমি না হয় খণ্ডন। বিফল হইবে যত করিনু পঠন।। আমি যত পড়াইব আর শিষ্যগণে। তারা ফলদায়ী হবে মোর অধ্যয়নে।। এত বলি কচ গেল ইন্দ্রের নগর। কচে দেখি আনন্দিত যতেক অমর।। নিঃশঙ্ক হইয়া যুদ্ধ করে দেবগণ।। দেব-দৈত্য-যুদ্ধকথা না যায় লিখন। এক্ষণে শুনহ দেবযানীর কথন।। মহাভারতের কথা ব্যাসের রচিত। পাঁচালী প্রবন্ধে কাশীদাস বিরচিত।।
------ দেবযানীর উপাখ্যান জন্মেজয় জিজ্ঞাসিল যুড়ি দুই পাণি। কি প্রকারে বিবাহিত হৈল দেবযানী।। মুনি বলে অবধান কর দণ্ডধর। তাহার বিবাহ কথা অতি মনোহর।। তার কতদিন পরে বৃষপর্ব্বপুরে। কন্যাগণ মিলি গেল স্নান করিবারে।। শর্ম্মিষ্ঠা নামেতে বৃষপর্ব্বের কুমারী। স্নানেতে চলিল দাসীগণ সঙ্গে করি।। শুক্রকন্যা দেবযানী চলিল সংহতি। চলিল একত্রে সবে স্নানেতে যুবতী।। চৈত্ররথ নামে বনে আছে সরোবর। জলক্রীড়া করে সবে তাহার ভিতর।। নিজ নিজ বস্ত্র সব রাখি তার কূলে। উন্মত্তা হইয়া সবে ক্রীড়া করে জলে।। হেনকালে খরতর বহিল পবন। একত্র করিল যত সবার বসন।। জলক্রীড়া করি সবে উঠি কন্যাগণ। চিনিয়া পরিল সবে আপন বসন।। শর্ম্মিষ্ঠা দৈত্যের কন্যা উঠি শীঘ্রগতি। দেবযানী বস্ত্র পরে হইয়া বিস্মৃতি।। দেবযানী বলে তোর এত অহঙ্কার। শূদ্রা হ'য়ে বস্ত্র তুই পরিস আমার।। দেবযানী বাক্য শুনি শর্ম্মিষ্ঠা কুপিল। দেবযানী চাহি তবে ক্রোধেতে বলিল।। তোমায় আমায় দেখ অনেক অন্তর। মোর ধন খেয়ে রক্ষা কর কলেবর।। মোর বাপে তোর বাপ সদা স্তুতি করে। মোরে হেন বাক্য কহ কোন অহঙ্কারে।। অল্প হেন করি তোরে করি যে গণনা। মোর সঙ্গে দ্বন্দ্ব কর না চিন আপনা।। দেবযানী কূপে ফেলি গেল নিজাগার। মরিল কি বাঁচিল সে না দেখিল আর।। দৈবের নির্ব্বন্ধ কেবা খণ্ডিবারে পারে। সেই বনে গেল রাজা মৃগ মারিবারে।। মৃগয়াতে রত বড় নাহুষ-নন্দন। সসৈন্যে যযাতি রাজা গেল সেই বন।। তৃষ্ণায় পীড়িত হৈল যযাতি রাজন্। জল অন্বেষণে ভ্রমে সব সৈন্যগণ।। ভ্রমিতে ভ্রমিতে দেখে কূপের ভিতর। পড়িয়াছে কন্যা এক পরম সুন্দর।।