এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
সুচারু-দর্শনাং তীক্ষ্ণাং পীনোন্নত-পয়োধরাং।
আস্তে ব্যাস্তে লোক গিয়া জানায় রাজারে। শুনিয়া নৃপতি তবে এল' তথাকারে।। অতি পুরাতন কূপ আচ্ছন্ন তৃণেতে। পড়িয়াছে চন্দ্রের সমান কন্যা তাতে।। রাজা বলে কন্যা কহ নিজ বিবরণ। কূপে পড়িয়াছ তুমি কিসের কারণ।। দ্বিতীয় চন্দ্রের প্রায় ত্রৈলোক্যমোহিনী। কি নাম ধরহ তুমি কাহার নন্দিনী।। রাজার বচন শুনি বলে দেবযানী। দেবযানী মোর নাম শুক্রের নন্দিনী।। আমার বৃত্তান্ত রাজা কহিব পশ্চাতে। আগে নরপতি মোরে তোল কূপ হ'তে।। কুলীন পণ্ডিত তুমি দেখি মহাজন। মহাতেজোবন্ত দেখি রাজার লক্ষণ।। এত শুনি নৃপবর বলিল বার বার। তোমার বচন চিত্তে না লয় আমার।। ব্রাম্ভণের শ্রেষ্ঠ শুক্র তুমি কন্যা তার। দ্বিতীয় নবীন যুবা বয়স তোমার।। তেকারণে ছুঁইতে তোমারে না যুয়ায়। কন্যা বলে রাজা দায় নাহিক তোমায়।। অন্ধকূপে পড়িয়া আমার প্রাণ যায়। এত শুনি নরপতি কন্যার বচন। কন্যার দক্ষিন হস্ত ধরি ততক্ষণ।। করে ধরি নরপতি উপরে তুলিল। কন্যারে উদ্ধারি রায় নিজ দেশে গেল। হেনকালে ঘূর্ণিকা নামেতে সহচরী। সম্মুখে দেখিল তারে শুক্রের কুমারী।। কান্দি কহিলেন যত দুঃখ আপনার। পিতারে জানাও গিয়া মোর সমাচার।। পুনঃ নগরীতে নাহি করিব গমন। কোন্ লাজে লোকে আমি দেখাব বদন।। চলি যাহ ঘূর্ণিকা গো কহ পিতৃস্থান। তাঁহাকে কহিয়া আমি ত্যাজিব পরাণ।। ত্বরিতে জানাও বাপে শুন গুণবতী। এত শুনি ঘূর্ণিকা চলিল শীঘ্রগতি।। করযোড়ে ঘূর্ণিকা কহিছে সবিস্ময়। দেবযানী-বৃত্তান্ত শুনহ মহাশয়।। শর্ম্মিষ্ঠা সহিত গেল স্নান করিবারে। বলেতে শর্ম্মিষ্ঠা কূপে ফেলাইল তারে।। এত শুনি শুক্র হৈল বিরস-বদন। দেবযানী দেখিবারে করিল গমন।। দেখে শুক্র দেবযানী বনের ভিতরে।। হেঁটমুখে বসিয়াছে চক্ষে জল ঝরে।। বস্ত্র দিয়া দৈত্যগুরু মুছায়ে বদন। জিজ্ঞাসিল বার্ত্তা কহ কিবা বিবরণ।। কোন্ কালে তুমি যে করিয়াছিলে পাপ। তাহার কারণে তুমি পাইলে এ তাপ।। পাপ হৈতে দুঃখ পায় না যায় খণ্ডন। শুনি দেবযানী বলে করূণ বচন।। পাপ নাহি জানি গ যাবৎ মোর জ্ঞান। কহি যত বিবরণ কর অবধান।। বৃষপর্ব্বকন্যা বলে আমারে ধরিয়া। কূপে ফেলাইয়া গৃহে গেল সে চলিয়া।। শূদ্রা হৈয়া মম বস্ত্র করিল পিন্ধন। কতেক কহিব যে কহিল কুবচন।। মোর বাপে স্তুতি শুক্র করে অনুব্রতে। সকুটুম্ব বাঁচায় আমার ধন হৈতে। পুনঃ পুনঃ কহিলেক যা আইল মুখে।। তার বাক্য বজ্র হেন লাগিয়াছে বুকে।। শুক্র বলে দেবযানী ত্যাজ মনস্তাপ। ক্রোধে লোক ভ্রষ্ট হয় ক্রোধে হয় পাপ।। অক্রোধের সম পুণ্য নাহিক সংসারে। সর্ব্ব ধর্ম্মে ধার্ম্মিক যে ক্রোধকে সম্বরে।। শতেক বৎসর তপ করে যেইজন। অক্রোধী সহিত সম নহে কদাচন।। দেবযানী বলে পিতা আমি সব জানি। অপ্রতিভা কৈল মোরে দৈত্যের নন্দিনী।। সর্পের দংশনে যেন বিষে অঙ্গ দয়। কাষ্ঠে কাষ্ঠে ঘর্ষণে যেমন অগ্নি হয়।। কন্যার বচন শুনি ভৃগুর নন্দন। বৃষপর্ব্বদৈত্যস্থানে করিল গমন।।