পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তীক্ষ্ণবাণং তথা শক্তিংবাহুসংঘেষু সঙ্গত্ং।।

 শর্ম্মিষ্ঠা বলেন সখী দৈবের লিখন।
 মম ঋতুকালে আসে ঋষি একজন।।
 কামভাবে তাহারে না করিনু কামনা।
 পুত্রদান দিয়া মোরে গেল সেইজনা।।
 দেবযানী বলে সখী কহ সত্যকথা।
 কি নাম ঋষির পুত্র তাঁর বাস কোথা।
 শর্মিষ্ঠা বলেন ঋষি পরম সুন্দর।
 মহাতেজ ধরে আর দিব্য কলেবর।।
 তাঁরে জিজ্ঞাসিতে শক্তি হইবে কাহার।
 সেকরণে নাম গোত্র না জানি তাঁহার।।
 দেবযানী বলে সখী তুমি পূণ্যবতী।
 ঋষিবরে হৈল পুত্র চন্দ্রসম দ্যুতি।।
 এত বলি দেবযানী গেল অতঃপুরে।
 হেনমতে যায় কত দিবস অন্তরে।।
 দেবযানী প্রসবিল যুগল নন্দন।
 যদু আর তুর্ব্বসু বিখ্যাত সর্ব্ব্জন।।
 শর্মিষ্ঠার গর্ভে জন্মে ঔরসে রাজার।
 ঋতুযোগে জন্মাইল এ তিন কুমার।।
 জ্যেষ্ঠ দ্রুহ্য অনু তার দ্বিতীয় কুমার।
 কনিষ্ঠ হইল পুরু সর্ব্বগুণাধার।।
 রাজার কুমার সব বাড়ে দিনে দিনে। 
 ঋষি হৈতে পুত্র হয় দেবযানী জানে।।
 মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
 কাশীরাম দাস কহে শুনে পূণ্যবান।
        -------
   যযাতির প্রতি শুক্রের অভিশাপ।
   কিছুদিন পরে তবে যযাতি নৃপতি।
 বিহারে চলিল দেবযানী সংহতি।।
 নানা বৃক্ষে সুশোভিত অশোকের বন।
 ফলে ফুলে সুগন্ধি কুহরে পক্ষিগণ।।
 দেবযানীসহ ক্রীড়া করে নৃপবর।
 শর্মিষ্ঠা আইল সেই বনের ভিতর।।
 শর্মিষ্ঠার তিন পুত্র বাপেরে দেখিয়া।
 রাজার নিকটে সবে আসিল ধইয়া।।
 সুন্দর কুমার তিন দেখি দেবযানী।
 জিজ্ঞাসিল কার পুত্র কহ নৃপমণি।।
 মৌনেতে রহিল রাজা না করে উত্তর।
 কুমারগণেরে জিজ্ঞাসিল অতঃপর।।
 কি নাম তোমরা ধর কাহার নন্দন।
 সত্য কহ এথায় আইলা কি কারণ।।
 দেবযানী বলে যদি এতেক বচন।
 প্রত্যেকে আপন নাম কহে তিনজন।।
 শর্মিষ্ঠা নামেতে আমা সবাকার মাতা।
 রাজা দেখাইয়া বলে এই মম পিতা।।
 এত বলি গেল তিনে রাজার নিকটে।
 প্রণিপাত করি দণ্ডাইল করপুটে।।
 দেবযানী ভয়ে রাজা বলিল না কিছু।
 বিরস হইয়া সবে বাহুরিল পিছু।।
 এত শুনি দেবযানী অরুণ নয়ন।
 শর্মিষ্ঠারে ডকিয়া বলিল ততক্ষণ।।
 পূর্ব্বে যে কহিলি তুই আমার গোচরে।
 এক ঋষি পুত্রদান দিলেন আমারে।।
 এক্ষণে তোমার কথা হইল বিদিত।
 শর্মিষ্ঠা শুনিয়া তাহা হইল বিস্মিত।।
 যোড়কর করিয়া শর্মিষ্ঠা কহে বাণী।
 ধর্ম্মে নাহি ঘাটি আমি শুন ঠাকুরাণী।।
 তুমি মম ঈশ্বরী তোমার রাজা পতি।
 সে কারণে মর ভর্ত্তা হৈল নরপতি।।
 সেবিকার পুত্রগণ তোমার সেবক।
 ক্রোধ পরিহার মোর দেখিয়া বালক।।
 ক্রোধে দেবযানী ভূপতির প্রতি বলে।
 শুক্রবাক্য লঙ্হন করিলা অবহেলে।
 গুরুবাক্য লঙ্ঘ আর ভজহ সেবকী।
 এবে জানিলাম তুমি পরম পাতকী।।
 আর না রহিব আমি তোমার সদন।
 এত বলি দেবযানী করেন ক্রণ্দন।।
 কান্দিতে কান্দিতে যায় জনকের ঘর।
 বিনয় করিয়া রাজা বুখান বিস্তর।।
 রাজার বিনয় বাক্য না শুনিল কানে।
 দেখিয়া পাইল বড় ভয় রাজা মনে।
 পাছে নাহি চায়, ক্রোধে যায় শীঘ্রগতি।
 পাছে পাছে নরপতি-চরিল সংহতি।।