এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
অধস্তান্মহিষং তদ্ব্দ্ বিশিরস্কং প্রদর্শয়েৎ।
কামরসে কামিনীগণেরে রাজা তোষে। সুহৃদ বান্ধব মন্ত্রী তোষে প্রিয়ভাষে।। হেনমতে রাজ্য করে সহস্র বৎসর। পূর্ব্ববাক্য স্মরণ করিল নৃপবর।। জরায় পীড়িত পুত্র দেখিয়া নৃপতি। আপনারে ধিক্কার করেন মহামতি।। আপনার জরা দিয়া দিনু পুত্রে দুঃখ। পুত্রের যৌবনে আমি ভুঞ্জিলাম সুখ।। কামে মাতি পুত্র কষ্ট না দেখি নয়নে। ধিক্ মোরে শত ধিক্ এ ছার জীবনে।। কামুকের কাম পূর্ণ না হয় কখন। যত ইচ্ছা তত বাড়ে নহে তৃপ্ত মন।। এত চিন্তি নরপতি বলিল নন্দনে। বহু ভোগ করিলাম তোমার যৌবনে।। পুত্রকর্ম্ম করি প্রীত করিলে আমারে। তোমার মহিমা যত ঘূষিবে সংসারে।। আপন যৌবন দেহ জরা দেহ মোরে। ছত্রদণ্ড দিব আমি তোমার উপরে।। এত বলি জরা নিল নাহুষ-নন্দন। পুরুর হইল প্রাপ্তি আপন যৌবন।। পুরু রাজা হবে বলি দিলেন ঘোষণা। পাত্র মত্র অমত্য ডাকিল সর্ব্বজনা।। ব্রাম্ভণ ক্ষত্রিয় বৈশ্য শূদ্র যত প্রজা। আনিল সবারে রাজ্যে নিমন্ত্রিয়া রাজা।। পুরু-অভিষেক দেখি যত প্রজাগণ। কহিতে লাগিল আর ক্ষত্র রাজগণ।। নানা শাস্ত্রে বিজ্ঞ তুমি নাহুষ-তনয়। জ্যেষ্ঠ পুত্র বিদ্যমানে কনিষ্ঠ কি হয়।। সর্ব্বগুণযুত যদু পরম সুন্দর। তাঁর বিদ্যমানে পুরু নহে রাজ্যেশ্বর।। ধর্ম্মনীতি যত তুমি জান মহাশয়। কনিষ্ঠে করিতা রাজা কোন্ শাস্ত্র কয়।। প্রজাদের হেন কথা শুনি নৃপবর। ক্ষণেক চিন্তিয়া মনে করিল উত্তর।। পিতৃমাতৃ-বাক্য যেই পুত্র নাহি রাখে। তারে পুত্র বলি হেন কোন্ শাস্ত্রে লেখে।। পুরুরে জানি যে আমি আপন কুমার। আর পুত্র অকারণে হইল আমার।। জরাতে পীড়িত আমি না ছিল যৌবন। আমা বাক্য না রাখিল এই চারিজন।। পণ্ডিত সুবুদ্ধি পুরু করিল স্বীকার। সহস্র বৎসর নিল মম জরাভার।। সে কারণে রাজ্যভারে পুরু যোগ্য হয়। হেন পুরু রাজা হবে ধর্ম্মে কেন ভয়।। প্রজাগণ বলে শুক্র জগতে বিদিত। তাঁর নাতিগণ যোগ্য সংসারে পূজিত।। তাহারে না দিয়া অন্যে দিবে অধিকার। হইলে শুক্রের ক্রোধ নাহিক নিস্তার।। রাজা বলে শুক্রেরে করেছি নিবেদন। যেই জরে লইবে সেই রাজ্যের ভাজন।। শুক্র বলে যেই পুত্র লবে জরাভার। আপনার রাজ্য তারে দিবে অধিকার।। প্রজাগণ বলে কিছু কহিতাম আর। শুক্র আজ্ঞা করিয়াছে নাহিক বিচার।। পিতৃমাতৃ বাক্যে যেই করয়ে পালন। তারে পুত্র বলি হেন বলে মুনিগণ।। এত যদি বলিল সকল প্রজাগণ। অভিষেক করিলেন পুরুকে তখন।। ছত্রদণ্ড দিল তবে নৃপতি যযাতি। সুতে শিক্ষা করাইল যত রাজনীতি।। আদিপর্ব্বে বিচিত্র যযাতি-উপাখ্যান। কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান্।।
------
যযাতির স্বর্গে গমন ও পতন
হইল নৃপতি পরে জরাযুক্ত অঙ্গ। রাজ্য ত্যাজি গেল বন মুনিগণ সঙ্গ।। কঠিন তপস্যা রাজা করে নিরন্তর। ফল-মূলাহার করে বনের ভিতর।। অতিথির পূজা রাজা করয়ে তথায়। হেনমতে সহস্র বৎসর কেটে যায়।। উঞ্ছবৃত্তি ব্রত করি বঞ্চে বহু ক্লেশ। ফলমুলাহার ত্যাজিলেন রাজা শেষ।।