এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
স্তূয়ুমানঞ্চ তদ্রুপ-মমরৈঃ সন্নিবেশয়েৎ
দীর্ধিকা নামেতে ছিল স্বর্গ বিদ্যাধরী। মুনিশাপে জলমধ্যে হইয়া শফরী।। সেই ত শফরী বীর্য্য করিল ভক্ষণ। খণ্ডন না যায় কভু দৈবের ঘটন।। তবে সেই দশমাসে ধীবরের জালে। পড়িল প্রবীণ মৎস তুলিলেক কুলে।। কূলেতে তুলিতে মৎস প্রসব হইল। মুনিশাপে মুক্ত হৈয়া নিজ দেশে গেল।। এক গুটি সূতা তাহে এক গুটি সূত। দেখিয়া ধীবরগণ মানিল অদ্ভূত।। যুগল সন্তান তবে ল'য়ে কোলে করি। গেল যথা পরিচর চেদী-অধিকারী।। অপূর্ব্ব দেখিয়া রাজা হইল বিস্ময়। কৈবর্ত্তে তনয়া দিয়া লইল তনয়।। অপুত্রক রাজা, পুত্রে করিল পালন। মৎসরাজ বলি নাম হইল ঘোষণ।। কন্যা ল'য়ে ধীবর আইল নিজ ঘরে। বহুবিধ যত্ন করি পালিল তাহারে।। রূপেতে তাহার সম না মিলে সংসারে। দোষের মধ্যে মৎসের গন্ধ কলেবরে।। দুর্গন্ধেতে কেহ তার নিকটে না যায়। দেখিয়া ধীবর-রাজ চিন্তিল উপায়।। যমুনার জল পথ গহন কাননে। সেই পথে নিত্য পার হয় মুনিগণে।। কন্যারে বলিল তুমি থাক এই স্থানে। ধর্ম্ম অর্থে পার কর যত মুনিগণে।। মহামুনি পরাশর শক্ত্রির কুমার। তীর্থযাত্রা করিবারে যান পুনর্ব্বার।। আচম্বিতে পরাশর আসে সেই পথে। কৈবর্ত্ত কুমারী কন্যা দেখিল নৌকাতে।। অনিন্দিত অঙ্গ তার প্রথম যৌবন। প্রমত্ত কোকিল-স্বর জিনিয়া বচন।। তাহার লাবণ্য দেখি মোহ গেল মুনি। জিজ্ঞাসিল কন্যা তুমি কাহার নন্দিনী।। কন্যা বলে আমি দাসরাজার কুমারী। পিতা মাতা নাম দিল মৎস্যগন্ধা করি।। মুনি বলে কন্যা তুমি জগৎমোহিনী। আমারে ভজহ, আমি পরাশর মুনি।। এত শুনি কন্যা বলে যুড়ি দুই কর। কন্যাজাতি প্রভু আমি নহি স্বতন্তর।। সহজে কৈবর্ত্তকন্যা হই নীচজাতি। অঙ্গেতে দুর্গন্ধ মম দেখ মহামতি।। দুর্গন্ধে নিকটে না আইসে কোন জনে। আমারে পরশ মুনি করিবে কেমনে।। এত শুনি হাসিয়া কহেন পরাশর। আমি বর দিব কন্যা নাহি কোন ডর।। মৎসের দুর্গন্ধ আছে তব কলেবরে। পদ্মগন্ধ হইবেক আমার এ বরে।। অনূঢ়া আছহ তুমি প্রথম যৌবনে। সদা এইরূপ থাক আমার বচনে।। বলিলে তোমার জন্ম কৈবর্ত্তের ঘরে। মহারাজ বিবাহ করিবে মম বরে।। এতেক বচন যদি সে মুনি বলিল। পূর্ব্ব গন্ধ ত্যাজি কন্যা পদ্মগন্ধ হৈল।। অত্যন্ত সুন্দরী হৈল মুনিরাজ বরে। আপনা নেহারে কন্যা হরিষ অন্তরে।। পুনরাপি বলে কন্যা যুড়ি দুই কর। খণ্ডিতে কাহার শক্তি তোমার উত্তর।। যমুনার দুই তটে আছে লোক জন। যমুনার জলে নৌকা আছে অগণন।। ইহার উপায় প্রভু চিন্তহ আপনি। লোকেতে প্রচার যেন না হয় কাহিনী।। শক্ত্রিপুত্র পরাশর মহা-তপোধন। আজ্ঞাতে করিল মুনি কুজ্বটি সৃজন।। যমুনার মধ্যে দ্বীপ হইল তখন। পদ্মগন্ধা কন্যা মুনি করিল রমন।। সেইকালে গর্ভ হৈল কন্যার উদরে। ব্যাসদেব জন্মিলেন বিখ্যাত সংসারে।। দ্বীপে জন্ম হেতু নাম তাঁর দ্বৈপায়ন। চারিভাগ কৈল বেদ ব্যাস সে কারণ।। জন্মমাত্র জননীরে বলেন বচন। আজ্ঞা কর মাতা আমি যাব তপোবন।।