এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
ভাগ্যং ভগবতী দেহি মে।।
নানাশাস্ত্র দ্ধর্ম্ম কহিছেন দেবস্থানে। উৎকণ্ঠা জন্মিল তাঁর মাতার স্মরণে।। সেইক্ষণে আসি তথা হৈল উপনীত। দেখি ভীষ্ম পূজা তাঁরে কৈল বিধিমত।। এতদিনে সত্যবতী দেখিয়া নন্দন। আলিঙ্গন দিয়া পুত্র করেন ক্রণ্দন।। নয়নেতে নীর ঝরে দুগ্ধ ঝরে স্তনে। স্তনদুগ্ধে স্নান করাইল তপোধনে।। মায়ের রোদন দেখি বিষণ্ণ বদন। কমণ্ডলু জল মুখে করিল সেচণ।। নিবারিয়া ক্রন্দন কহেন ব্যাসমুনি। কেন ডাকিয়াছ আজ্ঞা করহ জননী।। কি করিব তোমার প্রিয় আজ্ঞা দেহ মোরে। কি কর্ম্ম অসাধ্য তব সংসার ভিতরে।। সত্যবতী কহে পুত্র কহিতে অশেষ। আমার দুঃখের কথা নাহি পরিশেষ।। শিশু-পুত্র রাখি স্বামী গেল স্বর্গবাস। গন্ধর্ব্বেতে জ্যেষ্ঠপুত্র করিল বিনাশ।। কনিষ্ঠ বালকে ভীষ্ম পালন করিল। কাশীরাজ দুই কন্যা বিবাহ যে দিল।। বংশ না হইতে সেই হইল নিধন। বিধবা যুগল বধূ নবীন যৌবন।। কুরুকুল অস্ত যায় নাহি রাজ্যস্বামী। এ শোক-সাগরে পুত্র পড়িয়াছি আমি।। উপায় না দেখি তোমা করিনু স্মরণ। উপায়ে আমার বংশ করহ রক্ষণ।। পিতা মাতা হৈতে হয় সন্তান-সন্ততি। এক বিনা অন্যে নহে সন্তান-সঙ্গতি।। তুমি পুত্র যেমন, তেমন দেবব্রত। ইহার উপায় কর দোঁহার সম্মত।। সে কারণে তোমা বিনা না দেখি উপায়। আপনি উদ্ধার কর কুল অস্ত যায়।। ব্যাস বলে জননি গো করিনু স্বীকার। করিব পালন আজ্ঞা যে হয় তোমার।। সত্যবতী বলে তব আছে ভ্রাতৃবধূ। পরম পবিত্র রূপ জিনি পূর্ণবিধু।। আপন ঔরসে তারে দেহ পুত্রদান। ইহা বিনা উপায় না দেখি আমি আন। ব্যাস বলে মাতা তুমি ধর্ম্মেতে তৎপর। ধর্ম্মেতে বিহিত এই আছে পরাম্পর।। তোমার বচন আমি করিব পালন। রাজ্যহিতে তব কুল করিব রক্ষণ।। আর এক নিবেদন শুনহ জননী। পবিত্র হইতে বধূ বলহ আপনি।। সম্পূর্ণ বৎসর এক ব্রত আচারিবে। দান যজ্ঞ ব্রত করি পবিত্র হইবে।। তবে যে পরশ অঙ্গ করিব তাহার। দেবতুল্য পরাক্রম হইবে কুমার।। সত্যবতী বলে পুত্র বিলম্ব না সয়। অরাজকে রাজ্য নষ্ট দুষ্ট-চোর-ভয়।। মায়ের বচনে বলে ব্যাস তপোধন। মোর ভয়ঙ্কর মুর্ত্তি হবে দরশন।। সেই মুর্ত্তি দেখি বধূ সহিবারে পারে। সুপুত্র হইবে তবে তাহার উদরে।। আসিব বলিয়া তবে বনে গেল ব্যাস। সত্যবতী চলে তবে অম্বিকার পাশ।। মধুর বচনে তবে বলে সত্যবতী। আমার বচন বধূ কর অবগতি।। মজিল ভারতবংশ নাহিক উপায়।। বংশরক্ষাহেতু কহি যে তোমায়।। যে উপায় বলে মোরে গঙ্গার কুমার। সেই ত উপায় আছে নিকটে তোমার।। অর্দ্ধরাত্রে আসিবেন তোমার ভাসুর। ভজিবে তাহারে তুমি ভয় করি দুর।। আপনি থাকিয়া তবে দেবী সত্যবতী। বিবিধ কুসুমে তার শয্যা দিল পাতি।। পুনঃ পুনঃ বলি দেবী গেল নিজ স্থান। অর্দ্ধরাত্রে ব্যাসদেব কৈল আগমন।। কৃষ্ণবর্ণ অঙ্গ সুপিঙ্গল জটাভার। ভয়ঙ্কর মুর্ত্তি যেন ভৈরব আকার।। দেখি মহাভয়ে রাণী মুদিল নয়ন। তবে ব্যাস মুনি হৈল বিস্মিত-বদন।।