পাতা:কাশীনাথ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

कांौनांथ নিত্য তাঁহাই করিত। সন্ধ্যার সময় কখনও মাঠে মাঠে আপনার মাঁ । ঘুরিয়া বেড়াইত ; কখনও নদীতীরের একটা পুরাতন অশ্বখ-বৃক্ষে শিকড়ের উপর বসিয়া, অস্তগামী সূৰ্য্যের রক্তিমাভা কেমন করিয়া একটির পর একটি করিয়া আকাশের গায় মিলাইয়া যায়, দেখিতে থাকিত ; কখনও গ্রামের জমীদার-বাটীর শিবমন্দিরে শিবের আরতি অৰ্দ্ধনিমীলিতনেত্ৰে অনুভব করিতে থাকিত, কখনও বা এসকল কিছুই করিত না, শুধু মাতুলের চণ্ডীমণ্ডপের অন্ধকার নিভৃত কোণে কম্বলের আসন পাতিয়া চুপ করিয়া বসিয়া থাকিত। যেন জগতে তাহার কৰ্ম্ম নাই, উদ্দেশ্য নাই, কামনা নাই । দ্বাদশ বর্ষ বয়ঃক্রমকালে তাহার পিতৃবিয়োগ হইয়াছিল ; এখন অষ্টাদশ বর্ষ বয়ঃক্রম হইয়াছে-এই ছয় বৎসর কাল মাতুলভবনে এইরূপে কাটিয়া যাইতেছে। সে এখন কি করিতেছে, পরে কি করিবে, আগে কি করিয়াছিল, এখন কি করা প্ৰয়োজন ও উচিত, এ সব কথা তাহার মনে আদৌ স্থান পাইত না । যেন তাহার এমনই করিয়া চিরদিন কাটিবে ; যেন এমনই ভাবে চিরদিন মামার বাড়ীর দুবেলা দুমুটো ভাত ও তিরস্কার খাইতে পাইবে । যেন তাহাকে আর কোথাও যাইতে হইবে না।--আর কিছুই করিতে হইবে না। তাহার সেই নীরব নিস্তব্ধ অন্ধকার কোণটি যেন চিরদিন তাহারই অধিকারে থাকিবে, কেহ কখনও সেটা দখল করিতে আসিবে না, কিংবা সরিয়া অন্যত্র বসিতে বলিবে না । পাড়ার কোনও লোক দয়া করিয়া কখনও ডাকিয়া বলিত, কাশীনাথ, এমন করিয়া কখনও কাহারও চলে নাই, তোমারও চলিবে না ; যাহা হীেক, একটা কিছু করা। কাশীনাথ জবাব দিত না ; শুধু মনে মনে ভাবিত, কি করিতেছি, এবং কি বা আমাকে করিতে হইবে । এমনি করিয়া কাশীনাথের দিন কাটিতেছিল। ;