দোষী? আমা হইতে আমার প্রিয়তমের স্নেহও সে ছিন্ন করে নাই, আমার আত্মীয়তা অধিকারও তাহা হইতে সে হরণ করে নাই —সৌভাগ্য ক্রমে সে না হয় তাঁহার প্রণয়িনী হইয়াছে, যদি তাহা না হইত—যদি কুসুমকে তিনি না ভালবাসিতেন— তাহা হইলেই যে আমি সে ভালবাসা পাইতাম এমন আশাও আমার মনে নাই। তবে তাহার উপর ক্রোধ বিদ্বেষ জন্মিবে কেন? বরঞ্চ বিপরীত। দ্বেষের পরিবর্ত্তে এই ঈর্ষার আঘাতে আমার হৃদয়ের একটি গুপ্ত প্রতিদ্বার সহসা খুলিয়া গেল। সত্য কথা বলিতে হইলে, ইতি পূর্ব্বে আমি কুসুমের প্রতি সখ্যভাব অনুভব করি নাই। কিন্তু যখনি মনে হইল—কুসুম আমার প্রিয়তমের প্রিয়তম—তখনি আমারও সে প্রিয় হইয়া উঠিল,— তাহার যে সকল গুণ রাশি এতদিন আমার অন্ধনয়নে অপ্রকাশিত ছিল—পরম প্রীতি ভাজন বন্ধুর মত সহসা সেই সবে আমি সাতিশয় আকৃষ্ট হইয়া উঠিলাম, এবং এই নবসখ্যতা ভাবে আমাকে এতদূর অধীর এতদূর বিহ্বল করিয়া তুলিল যে তখনি তাহাকে সখিত্বের ডোরে বাঁধিয়া তাহার সৌভাগ্যে আনন্দ প্রকাশ করিয়া পত্র লিখিবার জন্য ব্যগ্র হইয়া উঠিলাম। এমন কি মনের আবেগে বিছানা হইতে উঠিয়া পড়িলাম, কিন্তু ডেক্সের কাছাকাছি আসিয়া সহসা মন পরিবর্ত্তিত হইল, মনে হইল, ছি কুসুম কি ভাবিবে? আর কিই বা লিখিব! আস্তে আস্তে আবার ফিরিয়া গিয়া বিছানায় ঢুকিলাম।
পরদিন সকালে দিদি বলিলেন “সে আসবে জানিস?” আমার হৃৎপিণ্ড বেগে উঠিতে পড়িতে লাগিল। জিজ্ঞাসা করিলাম—“কবে?”