জীবনে কত মহাবিপদে পড়িয়াছি কিন্তু কখনও আমাকে এই সামান্য বিপদের মত এত কাতর এত অভিভূত করে নাই। যেন ভীষণ অন্ধকারে একাকী দাঁড়াইয়া, দেহে তীক্ষ শাণিতাস্ত্র বর্ষণ চলিতেছে, আত্মরক্ষার কিছুমাত্র উপায় নাই, হস্ত উঠাইতে মস্তক তুলিতে শতধার কৃপাণ তাহার তীক্ষতা আরো ভীষণরূপে অনুভব করাইয়া দিতেছে। আমি যন্ত্রণাজর্জ্জর কাতরপ্রাণে সর্ব্বাস্তঃকরণে কেবল ডাকিতেছি, মাত: পৃথিবী বিদীর্ণ হও আমি তোমার মধ্যে প্রবেশ করি। সে কাতর প্রার্থন ব্যর্থ হইল না, জগৎমাতার সিংহাসন বিকম্পিত করিয়া তাহ করুণা অনয়ন করিল। তখনো আমি সেই চৌকিতে সেইরূপ মুহ্যমান ভাবে বসিয়া আছি, চাকর আসিয়া খবর দিল বাবা আসিয়াছেন। বাবার আসিবার কথা ছিল বটে, তিনি লিখিয়াছিলেন আমাকে আসিয়া লইয়া যাইবেন, তবে এত শীঘ্র আসিবেন তাহা আমরা মনে করি নাই।
দিদির ঘরে প্রবেশ করিয়া স্তব্ধ হইয়া দাঁড়াইলাম, অগ্রসর হইয়া প্রণাম করিতেও সাহস হইল না, দেখিলাম বাবা অগ্নি মূর্ত্তি হইয়া ক্রোধবিকম্পিত উগ্রস্বরে দিদির সহিত কথা কহিতেছেন, বুঝিলাম অবশ্য আমাকে লইয়াই তাঁহাদের বাকবিতণ্ডা, কম্পিত কলেবরে সেখানে দাঁড়াইয়া রহিলাম, তাঁহারা আমার আগমন লক্ষ্য না করিয়াই পুর্ব্বের ভাবে কথা কহিতে লাগিলেন।