পকেট হইতে মুড়ি মুড়কি বিতরণ করিত, বোধ করি ইহা তাহার প্রাতরাশের অবশিষ্ট, আর বাকী সময় বই হাতে করিয়া মনে মনে নিজের পড়া মুখস্থ করিত ও মুখে গুণগুণ করিয়া গান গাহিত; এই তাহার এক বিশেষ অভ্যাস ছিল। আমরা কোন কোন সময় যদি ধরিয়া পড়িতাম, কি গাহিতেছ স্পষ্ট করিয়া গাও, ভাল করিয়া গাও, তা কখনও গাহিত না। একদিন কেবল আমরা তাহার গানের দু এক লাইন স্পষ্ট শুনিয়াছিলাম। আটচালায় প্রবেশ করিতে যাইতেছি, তাহার গুণগুণানি একটু স্পষ্টতর ভাবে কাণে গেল। প্রভা বলিল—তাহার সকলের চেয়ে দুষ্ট বুদ্ধি বেশী যোগাইত—‘ছোটু গান করছে এইখানে দাঁড়িয়ে শুনি, তাপর শিখে গিয়ে বলব কেমন শুনে নিয়েছি’। দু একদিন আগে কৃষ্ণমোহন বাবুর ছেলের পৈতে উপলক্ষে তাঁহার বাড়িতে কলিকাতার নাচ আসিয়াছিল। আমরা থিয়েটারকে নাচ বলিতাম। আমরাও দেখিতে গিয়াছিলাম, কিন্তু কি যে দেখিয়াছিলাম, কি যে অভিনয় হইয়াছিল তাহা যদিও জিজ্ঞাসা করিলে বলিতে পারিব না। আমি সমস্ত ক্ষণই প্রায় জ্যেঠাইমার কোলে মাথা দিয়া ঘুমাইয়াছিলাম, একবার কেবল একটা ভয়ঙ্কর চীৎকারে ঘুম ভাঙ্গিয়া গিয়া দেখি জরীর পোষাক পরা একজন রাজার ছেলে ভারী রাগিয়া গেছে, রাগিয়। জোরে জোরে তক্তার উপর লাথি মারিতেছে আর তরবারী উঠাইয়া চীৎকার করিতেছে। দেখিয়া ভারী ভয় হইল, তাহার পর আবার ঘুমাইয়া পড়িলাম। আর একবার জ্যেঠাইমা আমাকে জাগাইয়া দিয়াছিলেন; সেবার দেখিলাম কতকগুলি পরী শূন্যে ঝুলিতেছে। সে দৃশ্যটা বড় ভাল লাগিয়াছিল।
পাতা:কাহাকে?.djvu/১৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০
কাহাকে?