আপন হইতে টুটিয়া খসিয়া পড়িত। গানটির কি যে মোহ ছিল জানি না, শুনিতে শুনিতে বাল্যের স্মৃতিধারা পূর্ণপ্রবাহে উথলিয়া কুমারী-হৃদয়ের সুপ্ত অতৃপ্ত প্রেমাকাঙখাকে স্ফীত উচ্ছসিত করিয়া তুলিত। সঙ্গীতধ্বনি সুরে তানে উঠিয়া গড়িয়া যতই মধুরতা বর্ষণ করিত—ততই সে আকাঙখা তীব্র আকুলতর হইয়া প্রবল দ্রুতোচ্ছাসে তাহার চির-পরিচিত অথচ চিরনূতন কে জানে কোন অজানা প্রেমময় সাগর-দেবতার অন্বেষণে ধাবিত হইত,—তাহাতে আত্ম-বিলীন করিতে চাহিত। এই সুমধুর সুকোমল তীব্র অতৃপ্তির আতিশধ্যে ক্রমশ: যেন আপন হারাইয়া ফেলিতাম; সেই অপরিচিত মধুর গীত-সন্তাষণে মুগ্ধ স্মৃতিদ্বার উদঘাটিত করিয়া গায়ক ক্রমে আমার মনে নয়নে পরিচিত প্রিয়জনের মূর্ত্তিতে বিভাসিত হইয়া উঠিতেন; নূতনে পুরাতনে, অতীতে বর্ত্তমানে, স্মৃতি বাসনায় তখন একাকার হইয়া পড়িত—আমি জাগিয়া যেন স্বপ্ন-রাজ্যে বিচরণ করিতাম।
তিনি চলিয়া যাইবার পরেও সমস্ত রাত্রি ধরিয়া কেমন মেঘাচ্ছন্ন থাকিতাম,—স্বপ্নে জাগরণে ঐ একইরূপ ভাব আমাকে অভিভূত করিয়া রাখিত; পরদিন নিদ্রা ভঙ্গের পর হইতে সে ভাব অল্পে অল্পে দূর হইয়া যাইত। তিন চারি দিন পরে, কখনও সপ্তাহ পরে আবার তিনি যখন আসিতেন, তখন আমি সম্পূর্ণ প্রকৃতিস্থ-তখন আর সে ভাবের চিহ্ণমাত্র নাই; তখন তাই তাঁহাকে দেখিলে পূর্ব্ব ভাবের স্মৃতিতে এমন লজ্জাবোধ হইত! কিন্তু আবার গান আরম্ভ করিলেই যেকে সেহ! এ কি অপরূপ রহস্য জানি না; সুর্য্যের উদয়াস্তে পৃথিবী যেমন দ্বিমূর্ত্তি ধারণ