যাচ্ছি?” দিদি আমার মাথায় হাত বুলাইতে বুলাইতে আদর করিয়া বলিলেন—“লক্ষ্মি মণি আর কথা ক’সনে—ডাক্তার ঘুমাতে বলেছে—চুপ করে থাক—এখনি ঘুম আসবে।”
আমি থামিলাম, কিন্তু অশ্রধারা থামিল না; শত ধারায় উথলিয়া উঠিতে লাগিল, অথচ এ দুঃখ যে কেন—কেন যে কাঁদিতেছি তাহ কিছুই বুঝিলাম না; সুখ দুঃখ কিছুরই অনুভূতি আমার তখন ছিল না। কাঁদিতে কাঁদিতে—ছেলেমামুযের মত কাঁদিতে কাঁদিতে, দিদির স্নেহাদরের মধ্যে আমি ঘুমাইয়। পড়িলাম। সমস্ত রাত্রি ঘুমাইয়া কাটিল; অথচ সুনিদ্রা নহে; ঘুমাইয়াও মনে হইতেছিল যেন জাগিয়া আছি—অথবা জাগিয়া জাগিয়া ঘুমাইতেছি–মাথার মধ্যে কত রকম দৃশ্য কত রকম ঘটনা ছায়াবাজির মত একটির পর একটি কেমন অবিশ্রান্ত গতিতে ঘুরিয়া ফিরিয়া চলিয়া যাইতেছিল। এই যেন কে ছিল কে নাই, একজনের সহিত গল্প করিতেছিলাম—সে আর একজন হইয়া পড়িল,—কাহার বাড়ীতে যেন নিমন্ত্রণে যাইব—সাজ সজ্জা করিতেছি—কিছুতেই সজ্জা শেষ হইতেছে না;–বাড়ীর বাহির হইয়াছি, গাড়ি খুঁজিতেছি—কিছুতেই খুঁজিয়া মিলিতেছে না; অবশেষে পায়ে চলিতেছি—পথ ফুরাইতেছে না, যদি বা পথ ফুরাইল কাহার বাড়ী যাইতে কাহার বাড়ী আসিয়াছি,—এই রকম সব হিজিবিজি স্বপ্ন;–শেষ স্বপ্নটি কেবল বেশ স্পষ্ট—এত স্পষ্ট—যে তাই এখনো আমার জ্বলন্তরূপে মনে আছে। স্বপ্না দেখিলাম যেন আমার বিবাহ হইতেছে, আমি আগ্রহ দৃষ্টিতে বরের দিকে চাহিলাম; কিন্তু মনে হইল এ সে নহে; নিতান্ত ব্যথিত হৃদয়ে চক্ষু নত করিলাম—তাঁহার চরণে দৃষ্টি পড়িল-অমনি